রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে স্লোগান দেওয়া নিয়ে সোনা মিয়া (৫৫) নামে দলের এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে সোনা মিয়ার বড় ছেলে আখতারুজ্জামান (২৯) বাদী হয়ে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ও হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে কাউনিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুন্তাছের বিল্লাহ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেন, এই মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মফু সালাম (৪৮), সাবেক সদস্য মোজাম্মেল হক (৫৫), কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান (৪৫), মাইদুল ইসলাম (৫০) ও আওয়ামী লীগের কর্মী আবদুল গফফার (৪৫)। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে আজ দুপুরে মামলা রেকর্ড হওয়ার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত সোমবার বিকেলে হারাগাছে কাউনিয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করতে উপজেলার খানসামারহাটের ইমামগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে যান বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু মুনশি। মন্ত্রী মাঠে এলে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মতবিনিময় সভা না করে চলে যান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এরপর রাত আটটার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সোনা মিয়া নিহত হন। সোনা মিয়া উপজেলার হারাগাছের নাজিরদহ এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। তিনি হারাগাছ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার অনুসারী বলে জানা যায়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, উপজেলার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত।
কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ও হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যার আগমুহূর্তে বিক্ষোভ করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। অভিযুক্ত এই দুজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে দুজনের নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’
রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সুলতানা রাজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।