বন্যায় বসতঘর হেলে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে দুশ্চিন্তায় গৃহবধূ শাহেদা। গত সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
বন্যায় বসতঘর হেলে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে দুশ্চিন্তায় গৃহবধূ শাহেদা। গত সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

বসতঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আশ্রয়কেন্দ্রে

১২ দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে দিন কাটছে শাহেদা আক্তারের (৩০)। সঙ্গে আছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বন্যার পানি খানিক কমেছে, তাই গতকাল সোমবার সকালে বাড়িতে গিয়ে ঘুরে এসেছেন। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে মন খারাপ হয়ে যায় তাঁর। রাজ্যের চিন্তা ভর করে মাথায়। বন্যার পানিতে একচালা টিনের বসতঘরটি হেলে পড়েছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরে কোথায় থাকবেন, সেই চিন্তায় ঘুম হারাম শাহেদা আক্তারের মতো অনেক পরিবারের।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন বন্যাকবলিত ২০০ পরিবারের কমপক্ষে ৬০০ মানুষ। পানি কিছুটা কমার কারণে তাঁদের কেউ কেউ বাড়ি ফিরছেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে গিয়ে আরও বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অনেক পরিবারের কাঁচা ঘর ও টিনশেড ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের ভিটেতে পা রাখা যায় না। ডুবে যায় কাদার ভেতর।

শাহেদা আক্তার বলেন, ছোট্ট একটি একচালা ঘরে তিন সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তিনি। স্বামী চট্টগ্রামে রিকশা চালান। বাড়িতে বন্যার পানিতে তাঁর ঘরের এক-তৃতীয়াংশই ডুবে গেছে। বাধ্য হয়ে সন্তানদের নিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্যার পানি না সরার কারণে বসতঘরটি হেলে গেছে। যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। ঘরটি কীভাবে মেরামত করবেন, সেটা ভেবে কূল পাচ্ছেন না। এ জন্য তিনি সরকারি সহায়তার আবেদন জানান।

একই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া আমেনা বেগম (৬০) বলেন, তাঁর বাড়িটি অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় ছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে রক্ষা পায়নি ঘরটি। বাধ্য হয়ে ঘর ছাড়েন তিনি। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আজ সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখেন, ঘরের ভিটার মাটি অনেক সরে গেছে। পা দেওয়া যায় না। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরে কীভাবে থাকবেন, তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা তাঁর।

এখনো যে পরিমাণ বন্যার পানি আছে, তা পুরোপুরি নামতে আরও অন্তত ১০ দিন লাগবে। কিন্তু শুনছেন শিগগির স্কুল খুলে দেওয়া হবে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজনকে বের করে দেওয়া হবে। ভাবনায় পড়েছেন স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন। কাজকর্ম নেই। আয়রোজগারও প্রায় বন্ধ। এভাবেই নিজের দুর্ভোগের কথা জানাচ্ছিলেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হুমায়ুন কবির (৫০)।

স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় নোয়াখালী ৯ উপজেলার মধ্যে ৮টি বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও নোয়াখালী সদর উপজেলার অনেক এলাকা এখনো পানিতে ডুবে আছে। এসব উপজেলার কমপক্ষে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। জেলার ১ হাজার ৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ১ হাজার ১৮৮ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন ৯ জন।