৭০ বছর বয়সী নারী জমিলা খাতুন। ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিক ছেলেরা ঢাকা থেকে তাঁর জন্য টাকা পাঠান। সেই টাকায় জীবন চালান এই বৃদ্ধা। গত রোববার থেকে বন্যার কারণে বাড়িতে পানিবন্দী হয়ে আছেন তিনি। রান্নাঘর পানিতে ডুবে থাকায় চার দিন ধরে রান্না করতেও পারেননি, ভাতও খেতে পারেননি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের পোড়াপুটিয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় জমিলা খাতুনের সঙ্গে। তাঁর বাড়ির চারদিকে পানি। সেখানে যেতে নৌকা বা ট্রলার ছাড়া উপায় নেই। আলাপকালে জমিলা খাতুন বলেন, ‘এই কয় দিন ঘরের সমান পানি গেছে। আইজ একটু কম। চাইর দিন ধইরা ভাত খাই না। ভাতের খিদা কি চিড়া-মুড়ি দিয়া মিটে?’
একই গ্রামের ভাঙারি ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়ার স্ত্রী নুরুন নাহার (৪০)। তাঁর বসতঘর থেকে আজ পানি সরেছে। আজ দুপুরে বসতঘরে গর্ত করে চুলা তৈরি করছিলেন তিনি। আট বছর বয়সী ছেলে আরিফুল ও সাত বছরের আতিকুরকে পাঠিয়েছেন বাবার বাড়ি। স্বামী-স্ত্রী মিলে রোববার থেকে পানিবন্দী। এক বেলার জন্য ভাত খেতে পারেননি তাঁরা। তাঁর বাড়ির চারদিকেই পানি। রন্নাঘর, টয়লেটসহ সব পানিতে তলিয়ে আছে। তাঁর স্বামী চাল কিনতে বাজারে গেছেন। গৃববধূ নুরুন নাহার বলেন, ‘আইজ ভাত রাইন্ধা ভাত খামু।’
চলমান বন্যায় বাড়িঘরে পানি থাকায় ভাতের কষ্টে ভুগছেন দুর্গত লোকজন। স্বেচ্ছাসেবীরা ট্রলার নিয়ে এলেই শুকনা খাবারে জন্য হাত পাতেন তাঁরা। সিংহেশ্বর ইউনিয়নের পোড়াপুটিয়া, পলাশকান্দা, ভাটিপাড়া, বনপাড়া, আনন্দবাজার গ্রামে নৌকায় করে দুর্গত লোকজনকে শুকনা খাবার দিতে দেখা গেছে। পলাশকান্দা এলাকায় ট্রলারে ত্রাণ নিয়ে আসার খবরে চারদিক থেকে ছুটে এলেন বন্যাদুর্গত মানুষ। মলিন চোখে সবাই হাত বাড়াচ্ছেন ত্রাণের জন্য। পানি মাড়িয়ে ত্রাণের জন্য হাত বাড়াচ্ছে শিশুরাও। গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কাদির বলেন, ‘দুই দিন ধইরা চিড়া খাইয়া আছি। চার-পাঁচ দিন ধইরা পানিতে। চুলা পানির তলে।’
বন্যাদুর্গত স্থানীয় বাসিন্দা আব্বাস আলী, জ্যোৎস্না বেগম ও রত্না বেগম জানালেন, তাঁদের ঘরে খাওয়ার পানির সংকট। শুকনা খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। পানিবন্দী লোকজনকে অনেকে শুকনা খাবার দিয়ে যাচ্ছেন।
ফুলপুরের সিংহেশ্বর ইউনিয়নের বনপাড়া সেতুর কাছে ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের ট্রলার দেখা গেল। বন্যাকবলিতদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া র্যাপিড রেসপন্স বিডি নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দলনেতা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাচ্ছি, মানুষ খাবারের সংকটের কথা বলছে। শুকনা খাবার খেয়ে হলেও মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। আছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। স্বল্প পরিমাণ ত্রাণ নিয়ে গেলে মানুষের চাপে আমরা বেকায়দায় পড়ে যাই।’
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৩২টি গ্রামের ৬ হাজার ৮০০ পরিবারের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন দল ত্রাণ দিচ্ছে। বেসরকারি লোকজন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে যেসব এলাকায় ত্রাণ দরকার, সেসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন।