ময়মনিসংহ মেডিকেল কলেজ কাউন্সিলের জরুরি সভায় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ চারটি সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন
ময়মনিসংহ মেডিকেল কলেজ কাউন্সিলের জরুরি সভায় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ চারটি সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ শনিবার শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজ গেটের সামনে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজ কাউন্সিলের জরুরি সভায় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ চারটি সিদ্ধান্ত হয়।

মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলা সাড়ে ১১টায় উপাধ্যক্ষের সভাপতিত্বে সভা হয়। সভায় সব শিক্ষকের সম্মতিক্রমে চারটি সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক  হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জারি করা হয়।

জরুরি সভার সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) ক্যাম্পাস, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেলে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি (স্বাচিপ, বিএমএ, ড্যাব ও অন্যান্য) এবং কর্মচারীদের যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের রাজনীতি সমূলে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস বা হোস্টেলে কেউ রাজনীতিতে জড়িত প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত এবং শনিবার শিক্ষক কাউন্সিলের জরুরি সভায় উপস্থিত থাকা কোন শিক্ষার্থীকে কোন শিক্ষক ভবিষ্যতে একাডেমিক বিষয়ে হেনস্থা করলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ কলেজে এবং হোস্টেলে র‌্যাগিং ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সরাসরি জড়িত শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে অবস্থান, একাডেমিক ক্লাস ও ক্যাম্পাসে আগমনের নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ আবাসনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সরাসরি বিরোধিতাকারী, হুমকি প্রদানকারী এবং শান্তিমিছিলের আয়োজক শিক্ষকদের পদত্যাগ, বদলি, লিখিত ক্ষমা প্রার্থনার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল কাদের গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন। তিনি চুক্তিভিক্তিক অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করলেও সে পদে কাউকে এখনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কলেজ এলাকায় বিক্ষোভ করতে শুরু করেন শিক্ষার্থী। কলেজের ফটকে তালাও দেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষকদের নিয়ে কলেজ কাউন্সিলের জরুরি সভা করেন উপাধ্যক্ষ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র রাজনীতির কারণে তারা দীর্ঘদিন অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। শিক্ষকদেরও তটস্থ করে রাখতে ছাত্রলীগ। কেউ তাদের অত্যাচারে প্রতিবাদ করতে পারত না। কলেজে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা খুশি।

মেডিকেল কলেজের দুজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে আন্দোলনে শুরু করে। এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো দরকার। তাই ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরেননি। তাঁরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শনিবার ক্লাস বর্জন করে কলেজের গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি সভা করে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিসহ চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ৬০-৭০ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।