বাগেরহাটের শরণখোলার শতবর্ষী সেই সরকারি পুকুরটি রক্ষায় আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। নোটিশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়েছে। বেলা নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত নোটিশ গতকাল সোমবার বিবাদীদের পাঠানো হয়েছে।
পুকুরটি রক্ষার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে বাদীকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ রয়েছে। বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশের অন্য বিবাদীরা হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক; বাগেরহাটের পুলিশ সুপার, বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক।
নোটিশে বলা হয়েছে, জেলার শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দাবাজার এলাকায় একটি শতবর্ষী পুকুর, যার আয়তন ১ একর ৩৫ শতক। জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন এসএ ৫৬৩ এবং বিআরএস ১২০৩৯ নম্বর দাগের এ পুকুরটি রায়েন্দাবাজার ও উত্তর কদমতলা অঞ্চলের একমাত্র মিষ্টি পানির আধার হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সুপেয় পানির সংকটে থাকা উল্লেখিত এলাকার পাঁচ হাজারের বেশি পরিবারের পানির চাহিদা পূরণ করে থাকে এই পুকুর।
তা ছাড়া কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানির জন্য এ পুকুরের ওপর নির্ভরশীল। সর্বোপরি ভয়াবহ দুর্যোগের সময় উপকূলীয় এই এলাকায় যখন সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়, সে সময় এ পুকুরটিই এলাকাবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাই অবিলম্বে পুকুর হিসেবে চিহ্নিত স্থানে আধাপাকা ঘর ও গাইডওয়াল নির্মাণের অনুমোদন বাতিলসহ পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনসংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ করা এবং পুকুরের জায়গায় পূর্বের বরাদ্দকৃত বন্দোবস্ত বাতিলেরও দাবি জানানো হয় ওই নোটিশে। একই সঙ্গে উল্লেখিত পুকুরটি শ্রেণি অপরিবর্তিত রেখে সংস্কার করে, তা পুকুর হিসেবে সংরক্ষণের কথাও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান জানান, পুকুরটি ওই এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় মানুষের একমাত্র সুপেয় পানির উৎস। ইতিমধ্যে পুকুরের একটি অংশ দখল করে মার্কেট তৈরি করা হয়েছে। এখন আবার অন্য পাশে মার্কেট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এগুলো পুকুরটিকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলারই উদ্যোগ। আমরা জনস্বার্থে শতবর্ষী পুকুরটি রক্ষায় লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। নোটিশ প্রেরণের সাত দিনের মধ্যে এ–সংক্রান্ত গৃহীত পদক্ষেপ বাদীকে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব।’
তবে আজ বিকেল পর্যন্ত কোনো আইনি নোটিশ পাননি বলে জানান বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এখনো কোনো আইনি নোটিশ পাননি। জেলা পরিষদ এরই মধ্যে পুকুরে মার্কেট নির্মাণের কাজ স্থগিত করেছে। নোটিশ পেলে এর জবাব দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দাবাজারের রায়েন্দা পুকুরটি স্থানীয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার পরিবারের সুপেয় পানির একমাত্র উৎস। তবে শতবর্ষী পুকুরটির একাংশ ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের জন্য গত ২০২২ সালের ১৭ জুলাই ইজারা বন্দোবস্ত দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। শিরিন সুলতানা রুমি, আসাদুজ্জামান খান, উজ্জলা সাহা, অম্বরিশ রায়, মৌসুফা নুর, ইমরান উদ্দিন, শিশির কুমার সাহাসহ সাতজনের নামে এই ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
চলতি বছরের গত ২০ জুন জেলা পরিষদ থেকে এ–সংক্রান্ত একটি পত্র শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে আসার পর ইজারার বিষয়টি প্রকাশ পায়। এরপরই স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা মার্কেট নির্মাণ বন্ধ, ইজারা বাতিলসহ পুকুরটি রক্ষায় প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। আন্দোলনের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে জেলা পরিষদ।