সুন্দরবনের একটি খালে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে আহত হয়েছেন আবদুল ওয়াজেদ আলী গাজী (৪৫) নামের এক জেলে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কৈখালী স্টেশনের কাছিকাটা দাড়গাং খালে তিনি বাঘের আক্রমণের শিকার হন।
আবদুল জুব্বার গাজীর ছেলে আহত আবদুল ওয়াজেদ গাজীর বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ছোট ভেটখালী গ্রামে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাঁর ছোট ভাই লিয়াকত আলী গাজীর কৈখালী ইউনিয়নের বৈশখালী গ্রামের বাড়িতে। কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবদুল ওয়াজেদ অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করে ভারতের অংশে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
লিয়াকত আলী গাজী বলেন, তিনি ও তাঁর ভাই ওয়াজেদ আলী গাজী মিলে গত শুক্রবার সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যান। মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে ভারত সীমান্তের রায়মঙ্গল নদের শাখা কাছিকাটা দাড়গাং খালে কাঁকড়া ধরার জন্য পেতে রাখা আটল (কাঁকড়া ধরার বাক্স) তুলতে গেলে হঠাৎ একটি বাঘ তাঁর ভাই ওয়াজেদ আলী গাজীর ওপর হামলে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে নৌকায় থাকা লাঠি নিয়ে তিনি বাঘের ওপর পাল্টা হামলা চালান। দু-তিন মিনিট পর বাঘটি তাঁর ভাইকে ছেড়ে দিয়ে বনের মধ্যে চলে চায়। তারপর তিনি ভাইকে নিয়ে মঙ্গলবার সারা রাত নৌকা বেয়ে বুধবার ভোর চারটার দিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন। আজ বুধবার সকাল ছয়টার দিকে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক অমল কুমার বৈদ্যকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে তাঁর চিকিৎসা শুরু করেছেন।
লিয়াকত আলী গাজী বলেন, তাঁরা মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাং গ্রামের শহিদুল ইসলাম নামের একজনের মাধ্যমে কাঁকড়া ধরার পাস (অনুমতি) কেটেছিলেন। ওই পাস নিয়ে তাঁরা সুন্দরবনে শুক্রবার ঢুকেছিলেন।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোচাইন চৌধুরী বলেন, আবদুল ওয়াজেদ আলী গাজী অবৈধভাবে সুন্দরবনে ঢুকেছিলেন। একপর্যায়ে তিনি মঙ্গলবার কাছিকাটা দাড়গাং এলাকার বিপরীতে ভারতের ভেতর ঢুকে মধু সংগ্রহকালে তাঁকে বাঘে আক্রমণ করে বলে তিনি শুনেছেন। আবদুল ওয়াজেদ আলী গাজীর নামে কোনো পাস কাটা হয়নি। তিনি সেখান থেকে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন কি না, এমন কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে মীরগাং গ্রামের শহীদুল ইসলাম বলেন, অনেক আগে ওয়াজেদের ভাই লিয়াকতের নামে একটি পাস কেটে দিয়েছিলেন। গত ছয় মাসের মধ্যে তাঁর মাধ্যমে তাঁরা পাস সংগ্রহ করেননি।
পল্লিচিকিৎসক অমল কুমার বৈদ্য বলেন, আজ সকালে তিনি আবদুল ওয়াজেদ আলী গাজীকে চিকিৎসা দিতে তাঁর ভাই লিয়াকত আলী গাজীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওয়াজেদ বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে তাঁর ঘাড়ে ও দুই কানের পাশে ক্ষত হয়েছে। তিনি ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বলেছেন শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে যেতে।