বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ বরগুনার ২৫ জেলের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। চার দিনেও সন্ধান না পাওয়ায় ওই ২৫ জেলে পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন।
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে পড়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এফবি এলাহী ভরসা ও রাত সাড়ে ১০টার দিকে এফবি মায়ের দোয়া ট্রলার দুটি ডুবে যায়। এ ঘটনার পর থেকে এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের ৮ জেলে ও এফবি এলাহী ভরসা ট্রলারের ১৭ জেলে নিখোঁজ। ওই ২৫ জেলের নিখোঁজের বিষয়ে পাথরঘাটা থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ২৫ জেলের সন্ধানে জিডির সূত্র ধরে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
এফবি এলাহী ভরসা ট্রলারের হলা মঝি (সহকারী মাঝি) শফিকুল ইসলাম নিখোঁজ জেলেদের একজন। তাঁর স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, ‘সাগরে রওনা দেওয়ার আগে বারবার বলছিল ট্রলারে গিয়ে এত দিন কেমনে থাকমু, মেয়েটাকে ছেড়ে ট্রলারে গিয়ে থাকতে মন চায় না। তাঁর ওই কথাই বারবার মনে পরছে। গত চার দিনেও তার কোন খোঁজ পাচ্ছি না। কেউ কোন খোঁজ দিতে পারছে না।’ এ কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারে চার জেলে চার ঘণ্টা সাগরে ভাসতে থেকে অপর একটি ট্রলারের সহায়তায় পটুয়াখালীর মহিপুরে পৌঁছায়। তবে ওই ট্রলারের অপর আট জেলে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত নিখোঁজ। একইভাবে ওই রাতে এফবি এলাহী ভরসার ১৭ জেলেসহ ওই মাছধরা ট্রলারের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির প্রথম আলোকে বলেন, দুটি ট্রলারের নিখোঁজ ২৫ জেলে পরিবারের স্বজনেরা উদ্বিগ্ন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের কাছে জনপ্রতি ৩০ কেজি চাল ও ৪ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, নিখোঁজ ২৫ জেলের সন্ধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। জেলেদের উদ্ধারে প্রশাসনের সমন্বয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাথরঘাটা থানার জিডি সূত্রে জানা গেছে, এফবি এলাহী ভরসা ট্রলারের ১৭ জেল হলেন আওয়াল বিশ্বাস, শফিকুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, আবদুল খালেক, মো. নান্টু মিয়া, মাহাতাব হোসেন, সিদ্দিক মৃধা, কালু মিয়া, মনির হোসেন, শহিদুল ইসলাম, মো. সোবাহান খাঁ, মো. ইউনুচ সরদার, মো. খলিলুর রহমান, আবদুর রব, আল আমিন বিশ্বাস, মো. লিটন ও মো. কালাম। তাঁদের বাড়ি বরগুনা সদর ও পাথরঘাটার বিভিন্ন গ্রামে।
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের ৮ জেল হলেন আবুল কালাম ওরফে কালু মাঝি, মজিবর চাপরাশি, মো. ইউসুফ আলী, মো. জাফর হোসেন, আবদুস সত্তার, মো. নাদিম, বেলাল হোসেন ও মো. ইয়াছিন। তাঁদের বাড়ি পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বড় টেংরা ও কাঁঠালতলি ইউনিয়নের ছফিলপুর গ্রামে।