চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব খান। গতকাল সন্ধ্যায়
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব খান। গতকাল সন্ধ্যায়

ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিও

গণধোলাই দিয়ে ছাত্রলীগকে থানায় সোপর্দ করতে বললেন ওসি

গণধোলাই দিয়ে ছাত্রলীগকে থানায় সোপর্দ করতে বলেছেন চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব খান। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেছেন। ওসির বক্তব্যের এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সরফভাটা উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কক্ষে এ সভার আয়োজন করে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর সওদাগর। সভার ভিডিওতে ওসিকে বলতে দেখা যায়, ‘যারা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে, মারপিট করেছে, দখল করেছে, তাদের গণধোলাই নিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। তাদের ঠাঁই হবে না। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঠাঁই হবে না। গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করবেন। আপনাদের এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ থাকলে, ঠ্যাং ভেঙে দিত। এটা যদি না পারেন, তবে আর কিছু বলার নেই। এখনো তারা কেমনে হাঁটে।’

বক্তব্যের শুরুতে ওসি বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার বীর সন্তান শহীদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি।’ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর রাতে কার্যকর হয়েছিল তাঁর মৃত্যুদণ্ড।

ওসির ওই বক্তব্যের ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা গেছে, তিনি পোশাক পরা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা পাশে ও সামনে বসে ছিলেন। বক্তব্যের বিভিন্ন পর্যায়ে সবাই হাততালি দিচ্ছিলেন।

ওসি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল মাস্টারমাইন্ড আমাদের আদর্শ তারেক রহমান। তাঁর নির্দেশে ঢাকাকে ছয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এই ছয় সেক্টরের লোকজনই নতুন করে স্বাধীন করেছে।’

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওসি বলেন, ‘বিএনপি বৃহত্তর একটি দল। দলমত, গ্রুপ থাকতেই পারে। দল যাঁকে নির্বাচনের জন্য প্রতীক দেবে, তাঁর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই কাজ করবেন।’

ওসি আহসান হাবিব খান বলেন, ‘আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গেছেন। ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই। অপরাধ ঘটলে সবকিছু থানার ওসির পক্ষে সম্ভব না। কিছু দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। যে লোকটা সৎ এবং যোগ্য, তাঁকে দিলে সুনাম হবে, বিএনপির সুনাম হবে। সেটা করতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না।’

ওসি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেছে। কিন্তু তার দোসররা আছে। যারা সাধারণ মানুষকে ১৬ বছর টর্চার করেছিল, নির্যাতন করেছিল, মেরে ফেলছে…সে মামলা করতে আগ্রহী। কিন্তু মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমি তাঁদের পরামর্শ দেব। প্রয়োজনে কোর্টে আলাপ করব, মামলাটি কীভাবে স্টাবলিশড করা যায়।’

বক্তব্য প্রসঙ্গে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিলেন। সেখানে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে। আমি বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমরা জনগণের পুলিশ হতে চাই। কিন্তু ভুল হয়ে গেছে।’

ওসির এ ধরনের বক্তব্য অপেশাদার বলে মনে করেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. রাসেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওসির বক্তব্যটি তিনি এখনো শোনেননি। যদি আবেগের বশে ওসি এসব কথা বলে থাকেন, তবে সেটি হবে অপেশাদার আচরণ। ওসির বক্তব্য শুনে ও যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।