‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ বলা আওয়ামী লীগ নেতাকে শোকজ

মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ বলা আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে ওই নোটিশে।

নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরীন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই নোটিশ দেন। সিরাজুল ইসলাম মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। নোটিশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাঁকে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুরে মাধবদী পৌরসভা মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলের মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সদর আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে হিরুর লোকজনকে উদ্দেশ্য করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’। তাঁর দেওয়া এ বক্তব্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে। পরে মালিক মোহাম্মদ রাজিব নামের এক ব্যক্তি নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এই ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার বদিউল আলমের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম। গতকাল বুধবার দুপুরে মাধবদী পৌরসভা মিলনায়তনে

ওই বক্তব্যে সিরাজুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। কাল থেকে নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না।’ এই বক্তব্য শুনে উপস্থিত লোকজন হাসাহাসি শুরু করলে তিনি নিজের বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, ‘হিরুর নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।’

সিরাজুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বদিউল আলম বলেন, এমন হুমকি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের এক মতবিনিময় সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না।’ পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক। এরপর শুক্রবার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দুই দফায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় সাত দিন ধরে তিনি নরসিংদী কারাগারে।