বাগেরহাটের চারটি আসনে নৌকা পেয়েছে ৮৩ ভাগ ভোট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের ৪টি আসনের সব কটি আসনেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকিগুলোতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা। এমনকি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পৌনে দুই লাখ থেকে সোয়া দুই লাখ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। জেলার এই চারটি আসনে যত ভোট পড়েছে, তার প্রায় ৮৩ শতাংশই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পেয়েছেন।

গত রোববার অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাগেরহাটের চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ২৬ জন। তাঁদের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী চার প্রার্থী এবং ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আওয়ামী লীগের এক নেতা ছাড়া ২১ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো সংসদীয় আসনে মোট প্রাপ্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পান, সেই ক্ষেত্রে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। বাগেরহাটে জামানত হারানো ২১ প্রার্থীর মধ্যে ২ জন স্বতন্ত্র ও ১৯ জন বিভিন্ন দলের প্রার্থী।

এই চারটি আসনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী চার প্রার্থী এবং একটি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাঁরা মোট প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৮৩ শতাংশ পেয়েছেন। বাকি ১৭ শতাংশ ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা পেয়েছেন। অর্থাৎ জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন ছাড়া বাকিগুলোতে নির্বাচন অনেকটা ‘একতরফা’ হয়েছে। বাগেরহাট-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর কিছুটা লড়াই হলেও বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সহজেই জয় পেয়েছেন।

বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কীভাবে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন বাগেরহাটের সম্পাদক এস কে এ হাসিব প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ এবং মানুষের ভেতর ব্যাপক সাড়া, তৎপরতা, আগ্রহ বা উৎফুল্লতাও ছিল না। মানুষের ভেতর একটা ধারণাই জন্মেছিল, ফলাফল অনেকটা আগে থেকেই নির্ধারিত। আর প্রতিদ্বন্দ্বী দল ও প্রার্থী সম্পর্কে আসলে প্রচার-প্রচারণা সেভাবে ছিল না। আরও যে দল ও প্রার্থী ছিল, সে সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের তেমন ধারণাও ছিল না।

কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থীরাও তাঁদের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং যথাযথভাবে প্রচারণা না চালানোর কথা স্বীকার করেছেন। এই বিষয়ে বিএনএমের বাগেরহাট জেলার সভাপতি ও বাগেরহাট-২ আসনের নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী সোলায়মান শিকদার বলেন, ‘আমরা আসলে প্রচার-প্রচারণার তেমন সুযোগ পাইনি। তা ছাড়া নতুন দল, আগামী নির্বাচনে আমরা ভালো করব। আরও একটু সময় পেলে আরও ভোট পেতাম।’

যদিও তৃণমূল বিএনপির বাগেরহাট-৩ আসনের প্রার্থী ও দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ম্যানুয়েল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এই সরকার জালজালিয়াতির সরকার। জুলুমবাজ সরকার। এই সরকার যে ভোট করছে, এইটা কোনো ভোট না। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট) আসনে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮২১টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৩টি। এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ হেলাল উদ্দিন ২ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. কামরুজ্জামান ৫ হাজার ২১০ ভোট পেয়েছেন।

বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে ১ লাখ ৮২ হাজার ৩১৮ ভোট নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ তন্ময়। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) হাজরা শহিদুল ইসলাম ৪ হাজার ১৭৪ ভোট পেয়েছেন।

বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে বিজয়ী প্রার্থী হাবিবুন নাহার পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৭২ এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৪৬৮ ভোট। এই আসনের অপর পাঁচ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা) আসনেও ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনই জামানত হারিয়েছেন। এই আসনের ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৪ ভোটের মধ্যে ২ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৭ ভোট পড়েছে। যেখানে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রতীকের এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঈগল প্রতীকের এম আর জামিল হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৭৬ ভোট।