বন্ধুর সঙ্গে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে আসে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী। রাত হয়ে যাওয়ায় তারা পথ হারিয়ে ফেলে। সাহায্যের কথা বলে বন্ধুকে বেঁধে রেখে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। গতকাল সোমবার রাতে নগরের পাহাড়তলী রেলস্টেশন ও দক্ষিণ খুলশী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আবুল কালাম নামের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে বন্ধুর সঙ্গে এসে প্রতারণা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক কিশোরী। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর বাড়ি কুমিল্লায়। তার মা মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা নেই। মুঠোফোনে ২০ বছর বয়সী মাদ্রাসাপড়ুয়া একজনের সঙ্গে ৬ মাস আগে তার পরিচয় হয়। ওই বন্ধুকে নিয়ে চট্টগ্রমে আসেন।
কিশোরীর বন্ধু জানান, গতকাল বেলা তিনটার দিকে কুমিল্লা থেকে রওনা দিয়ে তাঁরা দুজন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলস্টেশনে নামেন। তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা হয়ে যায়। পথ না চেনার কারণে তাঁরা পাহাড়তলী থেকে ঝাউতলা রেলস্টেশনে আসেন। সেখানে তাঁদের দেখতে পেয়ে এক যুবক এসে পথ চেনানোর কথা বলে এক পাশে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা চারজন ছিলেন। পরে তাঁর মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে যেতে বলেন।
ভয়ে একপর্যায়ে তাঁরা দুজন রেলস্টেশন থেকে বের হয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য পথ খুঁজতে থাকেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশার এক চালক এসে তাঁদের কাছে গন্তব্য জানতে চান। সব ঘটনা বলার পর চালক তাঁদের বটতলী রেলস্টেশন নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। প্রায় এক ঘণ্টা তাঁদের ঘুরিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের দক্ষিণ খুলশী এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যান। রাত হয়ে যাওয়ায় কুমিল্লার ট্রেন পাবেন না, তাই রাতটি সেখানে থাকতে বলেন। একপর্যায়ে সেখানে আরও তিনজন আসেন। কিশোরীর বন্ধুকে পাশের একটি কক্ষে আটকে রেখে চারজন ধর্ষণ করেন কিশোরীকে। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। রাস্তায় একপর্যায়ে সাহায্যের আশায় দাঁড়িয়ে থাকলে আরেক ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক এসে বিস্তারিত জানতে চান। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের কথা বলে আবার সেখানে নিয়ে যান। পরে আরেকজনকে ডেকে নিয়ে পুনরায় দুজন কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
তাঁদের একজন সরকারি সিটি কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী পাপ্পু মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাত আড়াইটার দিকে স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি জানান। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। বিস্তারিত জানার পর ভোর পাঁচটার দিকে তাঁদের খুলশী থানায় নিয়ে যান।