পঞ্চগড়ে নিজের কিশোরী মেয়েকে (১৫) ধর্ষণের দায়ে তার বাবাকে (৪৮) আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বি এম তারিকুল কবীর এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ড পাওয়া বাবা পঞ্চগড় সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আজিজার রহমান প্রথম আলোকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে তার বাবার বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কিশোরীরা পাঁচ ভাইবোন। তাদের বাবা আরও দুটি বিয়ে করায় তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর থেকে ওই কিশোরীসহ চার সন্তানকে নিয়ে তাদের মা নানার বাড়িতে থাকেন। ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক স্বজনের বিয়ের দাওয়াত খেতে ওই কিশোরী ও তার পাঁচ বছর বয়সী ছোট ভাইকে বাবার বাড়িতে যায়। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর তাদের সৎমা তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেলে রাতে দুই ভাই–বোন বাবার সঙ্গে একই ঘরে ঘুমায়। ওই রাতে কিশোরীকে ধর্ষণ করেন তার বাবা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের পর ঘটনাটি কাউকে বলতে নিষেধ করেন বাবা। এরপর ওই কিশোরীকে একাধিক দিন ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত বাবা। প্রায় ১৫ দিন পর ওই কিশোরী ও তার ছোট ভাইকে নানার বাড়িতে নিয়ে যান তাদের মা। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর কিশোরীটি অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৬ নভেম্বর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, সে আট সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরী ধর্ষণের ঘটনাটি তার মাকে খুলে বললে ১৮ নভেম্বর সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।
মামলার পর চলতি বছরের ২৮ মার্চ মামলার তদন্তকার কর্মকর্তা ও পঞ্চগড় সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত আজ এ রায় দেন।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী আকবর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা মনে করি, আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ জন্য আমার মক্কেল ন্যায়বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।’