আসামিরা এলাকার চিহ্নিত বখাটে, দুই দিনেও গ্রেপ্তার নেই

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

পাবনার সুজানগরে এক কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণ মামলার আসামিরা এলাকার চিহ্নিত বখাটে। তাঁরা মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ঘটনার দুই দিনেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
আজ রোববার দুপুরে মেয়েটির পরিবার এবং ওই এলাকার অন্তত ১০ থেকে ১২ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এর মধ্যে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরেছে। সে এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে।

মামলা সূত্রে ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মেয়েটি পড়ালেখা শেষ করে ঘরের বাইরে বের হয়। এ সময় তার বাড়ির লোকজন ঘুমাচ্ছিল। এ সময় মেয়েটির মুখ আটকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান কয়েকজন তরুণ। এরপর নির্মাণাধীন একটি ভবনে নিয়ে তাকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে মেয়েটির চিৎকার–চেঁচামেচিতে লোকজন এগিয়ে এলে ওই তরুণেরা পালিয়ে যান।

পরে পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে উদ্ধার করে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার সকালে মেয়েটির নানি বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সুজানগর থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন বারেক মণ্ডল (২৫), ইমন আলী (২৫), সাজিদ হোসেন (২৬), সাব্বির হোসেন (২৪) ও তুহিন (২৩)।

গ্রামের লোকজন ও মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ঘটনায় করা মামলার আসামিদের সবাই তরুণ। তাঁদের নির্ধারিত কোনো পেশা নেই। সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এলাকায় চিহ্নিত বখাটে হিসাবে পরিচিত। মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে বারেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে আগেও ধর্ষণের অভিযোগ ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা নেই, মা প্রতিবন্ধী। ছোট বেলা থেকে মেয়েটি নানির কাছে বড় হয়েছে। অভিভাবক বলতে কয়েক মামা ও নানি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বছর দুই হলো মেয়েটি স্কুলে যাচ্ছে না। বাড়িতে লোকজন কম। এই সুযোগেই তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতভম্ভ। গ্রামের লোকজন ও মেয়েটির পরিবারের দাবি, এলাকায় রাজনৈতিক দুটি ধারা রয়েছে। ফলে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। ঘটনায় রং মাখিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দোষ চাপাতে চাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘আমরা মেয়েটি ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের বক্তব্য ধরেই মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। এই মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের কোনো সুযোগ নেই। অপরাধ হয়েছে, আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’

মেয়েটির বড় মামার দাবি, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। কারও সঙ্গে তাঁদের কোনো বিরোধ নেই। ঘটনায় জড়িত আসামিরাও কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তাঁরা এলাকার বখাটে। বখাটেপনার অংশ হিসেবেই তাঁরা ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিন্তু একটি পক্ষ ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরীহ মানুষ। রাজনীতি বুঝি না। আমার ভাগ্নি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, ‘জেনেছি অভিযুক্ত ছেলেগুলো বখাটে, বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়। আমরা অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’

ঘটনাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা মেয়েটির বাড়ি পরিদর্শন করেছে। গ্রামের লোকজন, মেয়েটি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সবাই অভিযুক্ত আসামিদের বখাটে বলে উল্লেখ করেছেন। তারা গ্রামে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায় বলে জানিয়েছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।