কোদলা নদীর ৫ কিলোমিটার দখলমুক্ত করার দাবি বিজিবির, বিএসএফের অস্বীকার

ঝিনাইদহের মহেশপুরে কোদলা নদী ভারতীয় দখলমুক্ত করার পর বিজিবি কর্মকর্তারা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত সোমবার উপজেলার মাটিলা গ্রামে
ছবি: বিজিবির সৌজন্যে

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় কোদলা নদীর ৫ কিলোমিটার অংশ দখলমুক্ত করার দাবি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নদীর ওই অংশ বাংলাদেশি ভূখণ্ডের ভেতরে হলেও এত দিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) দখল করে রাখায় বাংলাদেশিরা প্রবেশ করতে পারতেন না। বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরতে নামলেও বাধা দিত বিএসএফ। নদীর ওই ৫ কিলোমিটার অংশে এখন যেকোনো বাংলাদেশি নামতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেছে বিজিবি।

গত সোমবার সন্ধ্যায় মহেশপুর ৫৮ বিজিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। তবে গতকাল মঙ্গলবার ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএসএফের বরাত দিয়ে তারা বিজিবির দাবি নাকচ করে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী, শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ পর্যন্ত দুই দেশকেই ছেড়ে দিতে হয়। বিজিবি জানায়, কোদলা নদী ভারত থেকে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় শূন্যরেখা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে মহেশপুরের মাটিলা সীমান্ত দিয়ে আবার ভারতে (রনঘাট) চলে গেছে। এর মধ্যে মাটিলা গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীটির ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশে বিএসএফ আধিপত্য দেখাত। ১৯৬১ সালে প্রণীত বাংলাদেশ-ভারত মানচিত্র অনুসারে, কোদলা নদীর ওই ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখার অভ্যন্তরে অবস্থিত। তবে নদীর এই অংশে বাংলাদেশি জনবসতি তুলনামূলক কম। এই সুযোগ নিয়ে বিএসএফ নদীর এই অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তি নদীর এই অংশে এলেই বিএসএফ এত দিন বাধা দিয়ে এসেছে। সম্প্রতি এ বিষয়টি ৫৮ বিজিবির নজরে এলে তারা বিভিন্ন নথিপত্র, স্থানীয় প্রশাসন ও মানচিত্র থেকে নদীটির সীমানা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বিএসএফের অবৈধ আধিপত্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। একপর্যায়ে ৫৮ বিজিবি সদস্যরা কোদলা নদীর এই ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে বিজিবি সদস্যরা সেখানে জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি যন্ত্রচালিত বোট ও দ্রুত টহলের জন্য অল টেরেইন ভেহিকেল (এটিভি) বরাদ্দ করেছে।

মহেশপুরের যাদবপুর ইউনিয়নের মাটিলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন বলেন, একসময় এই নদী থেকে প্রচুর মাছ ধরতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্বাধীনতার পর কোদলা নদীপাড়ের মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে বাংলাদেশের আরও অভ্যন্তরে বসবাস শুরু করলে মাটিলা গ্রামের পর কোদলা নদীর বাংলাদেশ অংশে বিএসএফ আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে কৃষকেরা মাঠে চাষাবাদ ও নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারতেন না। নদীর ওই অংশে গেলেই বিএসএফ বাধা দিত। এ নিয়ে মাটিলা গ্রামের মানুষের সঙ্গে বিএসএফের বাদানুবাদ হতো।

এদিকে নদী উদ্ধারের পর সোমবার দুপুরে মহেশপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. আজিজুস সহিদ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। স্থানীয় জনসাধারণ এ সময় বিজিবিকে জানান, বর্তমানে কোদলা নদীতে তাঁরা নির্বিঘ্নে যেতে পারছেন। নদী উদ্ধারে বিজিবিকে সহায়তার জন্য বিজিবি কর্মকর্তারা জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানান এবং নদীর প্রকৃত অবস্থান এবং মালিকানা সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মকে অবগত রাখার জন্য অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে নদীর বাংলাদেশ অংশে প্রয়োজনীয় সেচ ও চাষাবাদ জারি রাখার জন্য গ্রামবাসীকে অনুরোধ করে বিজিবি। এ ক্ষেত্রে কখনো কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি হলে তা সঙ্গে সঙ্গে বিজিবিকে জানাতেও গ্রামবাসীর প্রতি বিজিবি সদস্যরা অনুরোধ করেন।

এদিকে পিটিআই, আনন্দবাজার পত্রিকাসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমে গতকাল সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, কোদলা নদীর ৫ কিলোমিটার উদ্ধারের বিজিবির দাবি সত্য নয়। বিএসএফের তরফে বিজিবির এই দাবিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কোদলা নদীর প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মতো জায়গা ১৯৭৫ সালের সীমান্ত চুক্তি অনুসারে ভারতীয় ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। এর দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক।

এ বিষয়ে মহেশপুর ৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. আজিজুস সহিদ বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়ার খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তারা অসত্য তথ্য প্রকাশ করছে। আমার যে সংবাদ ব্রিফিং করেছি, তার বিষয়ে বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার অথবা কোম্পানি কমান্ডারের পক্ষ হতে কোনো লিখিত অথবা মৌখিক আপত্তি এখনো আমরা পাইনি।’