মাদক সেবন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে উত্তম আকাশ ওরফে আলিফ (২২) নামের এক তরুণকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে গুম করার চেষ্টার দায়ে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকগঞ্জের সিনিয়র দায়রা ও জেলা জজ জয়শ্রী সমদ্দার এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুবকের নাম ইমরান হোসেন ওরফে বিষু (২৬)। তিনি সিঙ্গাইর উপজেলার চর গোলড়া গ্রামের জামাল মোল্লার ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে নিহত উত্তম আকাশ সদর উপজেলার লেমুবাড়ি গ্রামের আবদুল আলীমের ছেলে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আকাশ ও ইমরান দুজন বন্ধু ছিলেন। তাঁরা ইয়াবা সেবন করতেন। আকাশের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নেন ইমরান। পরে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় আকাশের ওপর ক্ষুব্ধ হন ইমরান। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইমরান পাওনা টাকা নিতে ও ইয়াবা সেবনের জন্য আকাশকে চর গোলড়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে আসতে বলেন। ইমরানের কথামতো আকাশ ওই দিন সন্ধ্যায় ইমরানের বাড়িতে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে একটি কাঠবাগানে যান দুই বন্ধু। এ সময় আকাশ ইয়াবা চাইলে ইমরান তা দিতে অস্বীকার করলে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে ইমরান তাঁর প্যান্টের বেল্ট আকাশের গলায় পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করতে কেরোসিন ঢেলে লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
রাত ১২টার দিকে একটি কাঠবাগানে যান দুই বন্ধু। এ সময় আকাশ ইয়াবা চাইলে ইমরান তা দিতে অস্বীকার করলে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে ইমরান তাঁর প্যান্টের বেল্ট আকাশের গলায় পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করতে কেরোসিন ঢেলে লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
পরদিন সকালে সেখানে অগ্নিদগ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় সিঙ্গাইর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করেন থানার তৎকালীন এসআই আনোয়ার হোসেন। মামলার তদন্তে নিহত আকাশের পরিচয় এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি শনাক্ত হন। পরে ইমরানকে গ্রেপ্তার করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এ মামলায় ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জেলা ও জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মথুরনাথ সরকার, আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. আশরাফ উদ্দিন আহম্মেদ। এপিপি মথুরনাথ সরকার বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং সমস্ত নথিপত্র ঘেঁটে ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আশরাফ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করা হবে।