রাজশাহীর মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন জ্বলছে
রাজশাহীর মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন জ্বলছে

রাজশাহীর নগর ভবন, পুলিশ সদর দপ্তর, থানাসহ আ.লীগের একাধিক কার্যালয়ে আগুন

রাজশাহীর নগর ভবন, পুলিশ সদর দপ্তর, মেয়রের বাড়ি, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন দিয়েছেন জনতা। আজ সোমবার বিকেল ৫টায় এ ঘটনা ঘটে।

মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি আগুনের ঘটনা শত শত মানুষ মোবাইলে ধারণ করছিলেন। এ সময় ভেতরে থাকা চারজন পুলিশ সদস্য তাঁদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাঁদের উদ্ধার করতে ফায়ার সার্ভিস বা অন্য কোনো পুলিশকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি

একইভাবে আগুন জ্বলছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, এইচ এম খায়রুজ্জামন লিটনের ব্যক্তিগত কার্যালয়সহ আরও অনেক স্থাপনায়। এরই মধ্যে নগরের সব রাস্তাঘাটজুড়ে পতাকা নিয়ে হাজার হাজার মানুষ উল্লাস করছেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহী নগরের সড়কজুড়ে ছড়িয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। নারী-পুরুষ, শিশু সবাইকে রাস্তায় নেমে পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। এই আনন্দমিছিলে যাওয়ার সময় লোকজন নগরের কুমারপাড়া এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মালিকানাধীন সরকার টাওয়ারে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন। এখানে ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। একই এলাকায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন। এই কার্যালয়ের ভেতরে আগুন জ্বলছে। রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় অসংখ্য মানুষ রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছেন। সেখানে মাইকে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে কোনো একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও বাজানো হচ্ছে বিজয়ের গান।

রাজশাহী নগরের রানীবাজার এলাকায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন জ্বলছে। নিচে রাখা গাড়িও পুড়ছিল। এই ভবনে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। এই প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট করতে দেখা যায়। একটি দোকানের ব্যাগে ভরেই লোকজনকে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়। রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের ব্যক্তিগত কার্যালয়েও ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভবনের সামনে কয়েকটা মোটরসাইকেল রাখা ছিল, তা-ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়িতে আগুন দেন জনতা। আগুন নেভাতে কেউ এগিয়ে জাননি।

রাজশাহীর নগর ভবনে আগুন দিয়েছে জনতা

রাজশাহী নগরের সিঅ্যান্ডবির মোড়ে অবস্থিত পুলিশ সদর দপ্তরেও আগুন লাগানো হয়েছে। ভবনের নিচে একটি গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। বিকেলে রাজশাহী নগর ভবনেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটায় নগর ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত আগুন জ্বলতে দেখা যায়। নগর ভবন থেকে ল্যাপটপসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। নগরের সাগরপাড়া এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নতুন কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। একজন লোককে একটি জেনারেটর টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

এ ছাড়া রাজশাহী জেলা পরিষদ ভবনের সোনালী ব্যাংকে লুটপাট, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও বর্তমান সংসদ সদস্য, শফিকুর রহমান বাদশার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জেলা পুঠিয়ায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদের বাসায় আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা থানার ভেতরে রয়েছেন। আগুন দেওয়ার খবরটি শুনেছেন, কিন্তু থানা ছেড়ে যেতে পারেননি।

রাজশাহী নগরের এসব ঘটনার ব্যাপারে কথা বলার জন্য পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

এ ব্যাপারে বক্তব্য চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু প্রথম আলোকে জানান, তিনি এই রাজনীতি পছন্দ করেন না। তিনি সবাইকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।