‘বাবাগো তুমগোরে কম্বলডা পাইয়া খুব উপকার হইল, গায়ে দিয়ে ঘুরবার পামু’
জামালপুর সদর উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ১৭০ জন দুস্থ ব্যক্তিকে শীতের কম্বল দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকালে সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের ডেফুলীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ও দুপুরে মেষ্টা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের একটি মাঠে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।
কম্বল পেয়ে ৭২ বছর বয়সী ডেফুলীবাড়ী গ্রামের মহিরণ বেগম বলেন, ‘মাইনষের বাইত (বাড়ি) চাইয়ে-চাইয়ে খাই। ঘরবাড়ি নাই। মাইনষের বাইত থাহি। গত বছর এডা (একটা) কম্বল পাইছিলাম। হেডা (সেটা) আগুনে পুইড়া গেছে। আমগোরে এহানে বেশি জাড়। খেতা (কাঁথা) দিয়ে জাড় কাটে না। রাইতে হাইরে জাড় করে। বাবাগো তুমগোরে কম্বলডা পাইয়া খুব উপকার হইল। কম্বলডা গায়ে দিয়ে ঘুরবার পামু।’
লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে আসেন ডেফুলীবাড়ী গ্রামের হাসেন আলী (৮০)। কম্বল হাতে পেয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার পুলাপানরা (ছেলেমেয়ে) দেহে না। ওরা ঢাহাত (ঢাকা) থাহে। বউডাও মইরা গেছে। বুইড়া বয়সে কই যামু। রাইতে খুব শীত করে। দুইডা খেতা গায়ে দেই। শীত তো মানে না। বাপু, এই গ্রামের তুমরাই প্রথম্ম কম্বল দিলা। কম্বলডা মুডা (মোটা) আছে। খেতা আর কম্বল মিলে রাতে গায়ে দিমু। এইবার আর শীত করব না। আমগোর মতো বুইড়া-বুড়িগোরে খুঁইজে খুঁইজে কম্বল দিলা। এডা খুব ভালো হইছে।’
কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর জামালপুর প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ, জামালপুর প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি জাকারিয়া জাকি, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হাসান, ম্যাগাজিন সম্পাদক সোমাইয়া সরকার, জেন্ডার সমতাবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল নাঈমা, প্রচার সম্পাদক তাহমিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক সানি সিরাজ, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক রাকিবুল রহমান, সদস্য কাকন, নাঈম, জিদান, সাজ্জাদ, মতিন প্রমুখ।
মেষ্টা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. জোসনা মিয়া (৫৫)। ভ্যানগাড়িতে চড়ে কম্বল নিতে এসেছেন তিনি। কম্বল হাতে পেয়ে জোসনা বলেন, ‘দুই পাও (পা) নাই। চলতে-ফিরতে পাই না। অনেক কষ্টে জীবন চলে। কামকাজ করতে পারি না। মানুষের কাছ থেকে চাইয়ে খাই, জাড়ের জন্যে কম্বল কিনব ক্যামনে? আপনাগোরে কম্বলডা পাইয়া খুব উপকার হইল।’
একই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আবদুল জলিল বলেন, ‘শীত যাইতেছে, কেউ কম্বল দেয় নাই। আপনারাই প্রথম্ম এই গ্রামে আইছেন। কম্বলডা পাইয়া খুব খুশি লাগতেছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করমু।’ আমেনা বেগম বলেন, ‘এই শীতে অনেক কষ্ট হইতেছে। তুমগোরে কম্বলটা পাইয়া ভালো হইছে।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা)। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় কেনা কম্বল শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪; ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন, ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমে আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।