ভিজিএফের চাল আত্মসাতের মামলায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা মতিয়ার রহমান ও চাল ব্যবসায়ী মো. শাহাবুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। রোববার নড়াইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুজনকে কারাগারে পাঠান।
ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আর মো. শাহাবুর রহমান কাশিপুর ইউনিয়নের সারুলিয়া গ্রামের চাল ব্যবসায়ী।
নড়াইল আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। জামিনের সময়সীমা শেষ হলে রোববার তাঁরা নড়াইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. আমিনুল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে আবার জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে দুজনকে কারাগারে পাঠান।
দুদক সূত্র জানায়, ১৯ মে ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুদকে মামলা হয়। দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন মামলাটি করেন। মামলায় আসামি করা হয় কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, লোহাগড়া খাদ্যগুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরান হোসেন (বর্তমান ঝিনাইদহ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ও লোহাগড়া উপজেলার সারুলিয়া গ্রামের চাল ব্যবসায়ী মো. শাহাবুর রহমানকে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুস্থ মানুষের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ১৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়। কাশিপুর ইউপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ হাজার ৭৭০টি কার্ডের বিপরীতে ৪১ দশমিক ৫৫০ টন চাল। চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বরাদ্দ গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট ২৪ মেট্রিক টন চাল লোহাগড়া খাদ্যগুদাম থেকে উত্তোলন করেন। তাঁর ইউনিয়নের গুদামে চাল রাখার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার অজুহাতে তিনি ১৭ দশমিক ৫৫০ মেট্রিক টন চাল খাদ্যগুদামে রেখে আসেন। ওই দিনই চাল উত্তোলনের সময়সীমা ছিল। ওই চাল থেকে পরদিন খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কামরান হোসেন ৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন চাল চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগসাজশে চাল ব্যবসায়ী মো. শাহাবুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন, যার মূল্য ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৩ টাকা। খাদ্যগুদাম থেকে ওই চাল দুটি নছিমনে করে নড়াইলের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে গোপন সংবাদ পেয়ে চৌগাছা এলাকায় পুলিশ গিয়ে তা জব্দ করে। নছিমনসহ চাল থানায় নিয়ে আসে। বিষয়টি দুদকের তালিকাভুক্ত হওয়ায় পুলিশ লোহাগড়া থানায় জিডি করে তা দুদকে পাঠায়।
যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আল আমিন বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুদকের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই মামলা করা হয়। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন।
এ বিষয়ে এর আগে চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘খাদ্যগুদাম থেকে চাল বিক্রি হয়েছে। ওই চাল আমার ইউনিয়নের ছিল না। খাদ্যগুদাম থেকে চাল বিক্রির দায় আমার কীভাবে হয়? এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’