চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

‘শরীলডা একেবারে সিদ্দ হয়ে যাচ্চে’

গায়ে পানি দিয়ে তীব্র গরম থেকে স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা ভ্যানচালক সেলটন সরদারের। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার পাড়ায়
ছবি: শাহ আলম

চুয়াডাঙ্গায় টানা ১৫ দিনের মতো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা তিনটায় স্থানীয় প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা বলেন, ২ এপ্রিল থেকে শুরু করে টানা ১৫ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড চুয়াডাঙ্গার। তবে এই ১৫ দিনের মধ্যে ২ এপ্রিল ও আজ ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের তাপমাত্রা সমান রেকর্ড করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি গত ৯ বছরের মধ্যে এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা গরমে খেটে খাওয়া মানুষ ও প্রাণিকুলের নাভিশ্বাস অবস্থা। এই অবস্থা আরও কয়েক দিন চলতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, আজ আকাশে মাঝে মাঝে মেঘের উপস্থিতি দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও আগামী বুধবার নাগাদ বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।

চুয়াডাঙ্গা শহরের আড়তপট্টিতে অবস্থিত শাহজাহান হোটেলের কারিগর ইনতাজ আলী বলেন, ‘গ্যালো কদিন ধইরে যে গরম পড়চে, তা সহ্য করা যাচ্চে না। মনডা বলচে না আর কাজ করি।’ বড়বাজার নদীর ধার পট্টির কলা বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গরমের ঠ্যালায় গায় জামা-কাপুড় রাকতি পারচিনে। শরীলডা একেবারে সিদ্দ হয়ে যাচ্চে।’

এদিকে জেলা প্রশাসন আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ‘প্রচণ্ড তাপদাহে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। চলমান দাবদাহ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য দেন সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। অন্যদের সচেতন করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। গরমজনিত রোগবালাই দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত কাছের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে। হাতের কাছে খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট রাখতে হবে। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে দোকান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখতে হবে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে যাতে অগ্নিকাণ্ড না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন সাজ্জাৎ হাসান বলেন, তীব্র গরমে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। রোজাদারকে ইফতারির পর অন্তত ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। শরবত পান করতে হবে। ভাজাপোড়া খাওয়া যাবে না। খাবার স্যালাইন খেতে হবে। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে সারা দিনে ২ থেকে ৩ বার গোসল করতে হবে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মধ্যরাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। তীব্র গরমের কারণে এ সময় ফ্যান ও এসি চালানো হচ্ছে। বৈদ্যুতিক তারের সহ্য ক্ষমতা আছে। যে কারণে শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শুরু থেকে ২০ রোজা পর্যন্ত বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না থাকলেও ২১ রোজা থেকে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা আজ জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় তা স্বীকারও করেছেন। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চুয়াডাঙ্গা জোনের উপব্যবস্থাপক আয়েশা সিদ্দিকা সরকার বলেন, গতকাল লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করে। ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, ‘দাবদাহের কারণে গরমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে শিগগিরই তার সমাধান হয়ে যাবে।’

২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল ১৫ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ ১৬ এপ্রিল রোববার ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।