সুন্দরবনে হরিণের ৬০ কেজি মাংস উদ্ধার ও তিন ব্যক্তিকে আটকের ঘটনায় কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বন বিভাগের দাবি, মাংস উদ্ধারের বিষয়টি সাজানো ও রহস্যজনক ঘটনা। অন্যদিকে কোস্টগার্ড বন বিভাগের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে।
৫ এপ্রিল রাতে সুন্দরবনের শিবসা নদীর ‘মারগীর বাওন’ এলাকা থেকে হরিণের ৬০ কেজি মাংসসহ তিন শিকারিকে আটক করে কোস্টগার্ড। একই দিন হরিণের মাংসসহ আটক ব্যক্তিদের বন বিভাগের কয়রা বন টহল ফাঁড়িতে হস্তান্তর করতে চাইলে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপত্তি জানান। পরে মাংসসহ দাকোপ থানায় হস্তান্তর করা হয় তাঁদের।
বন বিভাগের দাবি, কোস্টগার্ড বন বিভাগকে অবহিত না করে বনের সংরক্ষিত এলাকা থেকে হরিণের মাংসসহ তিনজনকে আটক দেখিয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থল মার্কির খাল এলাকা কয়রা থানার অন্তর্গত। অথচ প্রথমে তারা আটক ব্যক্তিদের বন বিভাগের কয়রা বন টহল ফাঁড়িতে হস্তান্তরের চেষ্টা করেছে। পরে আংটিহারা কোস্টগার্ডের সদস্যরা নলিয়ান কোস্টগার্ডের কাছে হরিণের মাংস ও আটক ব্যক্তিদের হস্তান্তর করেন। এ সময় তাঁরা বন বিভাগের নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তার কাছে জব্দ করা মাংস ও আটক ব্যক্তিদের বুঝিয়ে দিতে চাইলে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা বলেন। কিন্তু নলিয়ান কোস্টগার্ডের সদস্যরা ঘটনাস্থলে না গিয়ে দাকোপ থানায় হস্তান্তর করেন।
বন বিভাগের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে কোস্টগার্ড জানিয়েছে, বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা হরিণের মাংস ও আটক ব্যক্তিদের বন বিভাগের কয়রা টহল ফাঁড়িতে নিয়ে গেলে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন হওয়ায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারাও অসহযোগিতা করায় বাধ্য হয়ে দাকোপ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান বলেন, কোস্টগার্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থল কয়রা থানার আওতাভুক্ত হওয়ায় জব্দ করা হরিণের মাংস ও আটক ব্যক্তিদের দাকোপ থানায় হস্তান্তর বিধিসম্মত হয়নি। তা ছাড়া যাঁদের আটক দেখানো হয়েছে, তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নন বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, আটক ব্যক্তিদের নৌকায় তল্লাশি করে হরিণ শিকারের কোনো আলামত পায়নি বন বিভাগ। এ কারণে ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোস্টগার্ড জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে সাদা কাগজে টিপসই নেওয়া হয়েছে। নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতি নিয়ে শিবসা বন টহল ফাঁড়ির কুমড়োকাটিতে নৌকায় করে মাছ ধরছিলেন জেলেরা। রাতে হঠাৎ একটি ট্রলার এসে কোস্টগার্ড পরিচয়ে তাঁদের নৌকাসহ আটক করে। এ সময় তাঁদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে জেলেরা কোস্টগার্ডের সামনেই তাঁর কাছে অভিযোগ করেন।
এই বন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরবনে যেকোনো অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে আগে থেকেই বন বিভাগকে জানাতে হয়। অথচ এ ঘটনা বন বিভাগকে জানানো হয়নি। এ ছাড়া কোস্টগার্ডের মিডিয়া সেল থেকে প্রেস কনফারেন্স করে ৬০ কেজি মাংস উদ্ধারের কথা জানালেও মামলার এজাহার ও জব্দ তালিকায় ৪০ কেজি মাংসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের মোংলা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার কাওসার বলেন, প্রেস কনফারেন্সের সময় আনুমানিক লেখা হয়েছিল। পরে মাংসের পরিমাপ নির্ধারণ করে থানায় হস্তান্তর করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁরা মাছ শিকারের আড়ালে হরিণ শিকার করে থাকেন। তাঁরা বন বিভাগের অভয়ারণ্য এলাকায় নৌকা নিয়ে অবস্থান করার সময় তাঁদের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। এ সময় ৪০ কেজি হরিণের মাংস, ৩টি মাথা, ৮টি পা, ৩টি মুঠোফোন ও ১টি নৌকা জব্দ করা হয়।