সিলেট সিটির ওয়ার্ড পরিক্রমা

সড়কজুড়ে যানবাহনের স্ট্যান্ড 

ওয়ার্ড নম্বর ১৯ ও ২০

দুই ওয়ার্ডের মশার উৎপাত ও পয়োনিষ্কাশনের সমস্যা এখনো মেটেনি। কিছু সড়ক ভাঙাচোরা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের টিলাগড় মোড়ে সড়কের কিছু অংশ দখল করে রেখেছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। সড়কের মধে্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী ওঠা–নামা করা হচ্ছে। গতকাল বেলা দুইটার দিকে

ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা সবজি, ফল, চটপটি ও ফুচকা বিক্রি করছেন। সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো করছেন চালকেরা। আছে অস্থায়ী অটোরিকশা স্ট্যান্ডও। এ দৃশ্য সিলেট নগরের ব্যস্ততম টিলাগড় মোড়ের। 

সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে টিলাগড় এলাকা পড়েছে। এ এলাকার পাশেই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ১৩১ বছরের পুরোনো মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ। এখানে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের এ মোড় পেরিয়ে কলেজে যেতে হয়। দুজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, একে তো টিলাগড় ব্যস্ত এলাকা। এর মধ্যে ফুটপাত দখল ও সড়কে অপরিকল্পিতভাবে যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো করানো হচ্ছে। ফলে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে।

টিলাগড় এলাকা ছাড়াও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে ভাটাটিকর, ব্রাহ্মণপাড়া, গোপালটিলা, হাতিমবাগ, লাকড়িপাড়া ও সাদিপুর। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলেন, অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় এ ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লার রাস্তাঘাট তুলনামূলকভাবে বেশ প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। তবে মশার উৎপাত ও পয়োনিষ্কাশনের সমস্যা এখনো মেটেনি।

শওকত আমীন ও আজাদুর রহমান

সরেজমিনে দেখা গেছে, এমসি কলেজ ছাত্রী হোস্টেল-১–এর বিপরীতে আবর্জনা স্তূপাকারে ফেলে রাখা। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সিলেট ডিভিশনের কার্যালয়ের সামনে এবং বোরহানবাগের বিপরীতে থাকা কালভার্টের পাশেও একই অবস্থা। এসব স্থান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় পথচারীরা নাক চেপে চলাচল করছেন। এ ছাড়া সাদিপুর, লাকড়িপাড়া, শিবগঞ্জ মণিপুরিপাড়া এলাকার সড়কের যত্রতত্র আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

খরাদিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস শুকুর (৬২) বলেন, এলাকায় সুপেয় পানির সংকট আছে। একদিন পানি সরবরাহ করা হয় তো, আরেক দিন করা হয় না। মাসখানেক আগে নালা প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করা হলেও খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা সড়ক সংস্কার করা হয়নি। তাই সারাক্ষণ ধুলা ওড়ে।

ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. আজাদুর রহমান বলেন, নগরের সব কটি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। টিলাগড় এলাকার রাস্তা বড় হওয়ার সুযোগ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা বসে পড়েন। তবে তাঁদের বসতে নিষেধ করা হয়। অটোরিকশাগুলো যেন যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো–নামানো না করায়, সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খরাদিপাড়ায় সুপেয় পানির কোনো সমস্যা নেই। বিদ্যুৎ না থাকলে পানির সরবরাহের সময়সূচিতে কিছুটা এদিক-সেদিক হয়। আবর্জনাও নিয়মিত অপসারণ করা হয়। ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কার এবং নালা-নর্দমা প্রশস্তকরণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

যত্রতত্র পড়ে থাকে আবর্জনা, মশার উৎপাত

শাহি ঈদগাহ এলাকার হাজি শাহমীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে কাদাপানি জমে আছে। সেখানে মশা-মাছি উড়ছে। বিদ্যালয়ের পাশেই আবর্জনা ছড়ানো ছিটানো। শাহি ঈদগাহ এলাকা থেকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যে সড়কটি গেছে, সেটি ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে শাহি ঈদগাহ এলাকা। এ ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে খারপাড়া, সোনারপাড়া, দপ্তরিপাড়া, দর্জিবন্দ, দর্জিপাড়া, কাহারপাড়া, পূর্ব রায়নগর ও রায়নগর রাজবাড়ি। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকায় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সড়কের যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকলেও তা অপসারণে খুব একটা উদ্যোগ দেখা যায় না। মশার উৎপাত আছে। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে। সরু গলি প্রশস্ত হওয়ায় দুর্ভোগ কমেছে। পানির সংকটও কম।

রায়নগর রাজবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী কবীর আহমদ (৪৫) বলেন, রাস্তায় স্থানীয় লোকজন আবর্জনা ফেলে চারপাশ নোংরা করে রাখে। 

কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তৌহিদ বলেন, ওয়ার্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল সুপেয় পানির সংকট। তিনি সেটা দূর করেছেন। পূর্ব শাহি ঈদগাহ এলাকায় পানির যে সংকট এখনো আছে, তা মাস দেড়েকের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। এ জন্য কাজ চলছে। দর্জিপাড়াসহ ওয়ার্ডের অসংখ্য সরু গলি প্রশস্তকরণ করেছেন। ওয়ার্ডের অন্তত ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছেন।