দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় এই আলেম গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। এর পর থেকে তাঁদের সাক্ষাতের সংবাদ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল রাত পৌনে আটটার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর একান্ত বৈঠক শুরু হয়। চলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। বৈঠকের পর থেকেই হুছামুদ্দীনের নির্বাচনী এলাকায় তাঁর অনুসারীরা বিষয়টিকে ‘শুভ ইঙ্গিত’ বলে প্রচার শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে মাওলানা হুছামুদ্দীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (হুছামুদ্দীন) কেন বৈঠক করেছেন কিংবা বৈঠকের বিষয়টি তিনি বা তাঁর অনুসারীরা কীভাবে ছড়াচ্ছেন, আমার জানা নেই। দল থেকে এ বিষয়ে (প্রধানমন্ত্রী-হুছামুদ্দীনের বৈঠক) কোনো বার্তাও দেওয়া হয়নি। আমি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করছি।’
জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হুছামুদ্দীন চৌধুরী সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর প্রয়াত বাবা আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী সারা দেশে ‘ফুলতলী হুজুর’ পরিচিত। আবদুল লতিফের তৈরি করা সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহের অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ আছেন। ফুলতলীর অনুসারীদের সিলেট-৫ আসনে একটা ‘ভোটব্যাংক’ আছে। এ অবস্থায় প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এসব ভোট কোন প্রার্থীর পক্ষে যাবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা আলোচনা থাকে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবার নির্বাচনে ফুলতলী হুজুরের ছেলে হুছামুদ্দীন চৌধুরী নিজেই প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় তাঁকে ঘিরে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। হুছামুদ্দীন শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ অন্য প্রার্থীরা অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন। এর মধ্যে হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
হুছামুদ্দীন চৌধুরী বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছি। আলোচনার ফাঁকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার প্রার্থিতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাধুবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।” আমার মতো একাধিক ব্যক্তির সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত বলেও প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনোনয়ন চাইলে সব দলই আমাকে মনোনয়ন দিত বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা আমার কোনো কালেও ছিল না। আমি স্বতন্ত্র থাকতে চাই। স্বতন্ত্র থেকে সব দলের ভুলত্রুটিসহ সার্বিক বিষয়ে সততার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মাসুক উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হুছামুদ্দীন চৌধুরী ছাড়াও আরও পাঁচজন প্রার্থী আছেন। তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মো. খায়রুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমদ আল কবির।