গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও অপসারিত হয়নি তোরণ, ব্যানার, পোস্টার। এতে নগরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেকটা শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। গাজীপুর নগরের রাজবাড়ি সড়কে
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও অপসারিত হয়নি তোরণ, ব্যানার, পোস্টার। এতে নগরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেকটা শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। গাজীপুর নগরের রাজবাড়ি সড়কে

গাজীপুর মহানগর আ.লীগ

সম্মেলনের তিন সপ্তাহেও সরেনি ব্যানার-পোস্টার

বাসিন্দাদের বাসাবাড়ি বা বিভিন্ন স্থাপনার সামনে বা দেয়ালে যত্রতত্র লাগানো হয়েছে পোস্টার–ব্যানার। এতে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে নগর।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হয়েছে গত ১৯ নভেম্বর। কিন্তু এখনো নগরের প্রধান রাস্তা, অলিগলি, দোকানপাট ও স্কুল-কলেজের সামনে রয়ে গেছে সম্মেলেনের তোরণ, ব্যানার-পোস্টার। এতে পারিপার্শ্বিক হয়ে উঠেছে দৃষ্টিকটু। শ্রীহীন হয়ে পড়েছে পুরো নগর।

শহরের রাজবাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এ উপলক্ষে অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই পদপ্রার্থীদের প্রচারসামগ্রীতে ছেয়ে যায় পুরো নগর। বিশেষ করে নগরের প্রধান সড়কগুলোতে স্থাপন করা হয় বড় বড় তোরণ। পাশাপাশি চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নগরের অলিগলিতে সাঁটানো হয় অসংখ্য ব্যানার-পোস্টার। কিন্তু সম্মেলন শেষ হওয়ার ২৩ দিন পরও সেসব রয়ে গেছে আগের মতোই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব প্রচারসামগ্রী সরাতে এখন পর্যন্ত কোনো কোনো লোক আসেনি। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন বা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মাঝে কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে এসব প্রচারসামগ্রী সরাতে গেলেও নানা ধরনের হুমকি-ধমকির মুখোমুখি হতে হয় বলে তাঁদের অভিযোগ।

আমি নিজেই একবার লোকজন নিয়ে খুঁটিটি অপসারণের চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু এর মাঝেই স্থানীয় কয়েকজন এসে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।
খাইরুল হাসান, দোকানি, জয়দেবপুর এলাকা

জয়দেবপুর শহর এলাকার খাইরুল হাসান নামের এক দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি তোরণের খুঁটি এসে পড়ছে আমার দোকানের সামনে। এই খুঁটির কারণে মানুষের চলতে–ফিরতে কষ্ট হয়। আমি নিজেই একবার লোকজন নিয়ে খুঁটিটি অপসারণের চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু এর মধে্যই স্থানীয় কয়েকজন এসে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এই কারণে তা আর সরাতে পারিনি।’

নগরের জয়দেবপুরের জোড়পুর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রোড, ধীরাশ্রম সড়ক, শিমুলতলী সড়ক, রাজবাড়ি সড়কসহ বোর্ডবাজার, টঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা, পূবাইল, সালনা, কোনাবাড়ী, বাসন, নিমতলী, মিরের বাজার বনমালা সড়ক, আক্কাছ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব প্রচারসামগ্রী দেখা যায়। এগুলোর কোনোটি ছিঁড়ে ঝুলে আছে, কোনোটি বাতাসে হেলে পড়েছে আবার কোনোটি–বা দাঁড়িয়ে আছে সড়কের একাংশ দখল করে।

নগরের টঙ্গীর বনমালা লেভেল ক্রসিং থেকে ধীরাশ্রম সড়ক ধরে জয়দেবপুরের দিকে যেতে পুরো সড়কেই চোখে পড়ে অসংখ্য ব্যানার, পোস্টার ও তোরণ। কয়েক জায়গায় সড়কের মাঝ বরাবর স্থাপন করা হয়েছে তোরণের খুঁটি। এর ফলে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে কখনো কখনো বেগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি রাস্তার পাশে দোকান ও বাসাবাড়ির সামনে ঝুলতে দেখা গেছে ব্যানার–পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী।

এসব প্রচারসামগ্রীতে অতিষ্ঠ হলেও কিছু করতে পারছেন না তাঁরা। তাঁরা বলছেন, সম্মেলন উপলক্ষে তাঁদের বাসাবাড়ি বা বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালজুড়ে যত্রতত্র লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টার। এতে প্রতিনিয়ত একধরনের বিব্রতকর পরিবেশের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁদের।

জয়দেবপুর ছায়াবীথি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষিক হাসনাত হেমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসা থেকে বের হলেই এসব ব্যানার–ফ্যাস্টুন বা প্রচারসামগ্রী দেখতে খুব দৃষ্টিকটু লাগে। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীরাও এসব নিয়ে তাঁদের বিরক্তির কথা জানান। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারি না।’

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ আছে কি না, তা জানতে কথা হয় সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমানের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি। খুব দ্রুতই সব প্রচারসামগ্রী অপসারণ করা হবে।’ এত দিন কেন করা হলো না, জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, দেরি একটু হয়েছে। কারণ, সম্মেলনের পরপরই আরও কয়েকটি সম্মেলন ছিল। তবে এখন আর দেরি হবে না। দু–এক দিনের মধ্যেই সব অপসারণ করা হবে।