জাহিদ ফারুক ও সাদিক আবদুল্লাহ
জাহিদ ফারুক ও সাদিক আবদুল্লাহ

বরিশালে জাহিদ ফারুক ও সাদিক আবদুল্লাহ, কার কত সম্পদ

গত পাঁচ বছরে বরিশাল-৫ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের আয় বেড়েছে প্রায় ৪০ গুণ। ঢাকায় তিনটি প্লট ও একটি ফ্ল্যাট বিক্রির অর্থ বিনিয়োগ করে তাঁর আয় বেড়েছে। তিনি এবারও এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আয় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। তবে তাঁর কাছে নগদ অর্থ রয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র।

গত ২৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহিদ ফারুক ও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁরা যে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন, সেটার সঙ্গে এ দুজনের পাঁচ বছর আগে দেওয়া সম্পদ বিবরণীর তুলনামূলক বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসনে এবং একই বছরে সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় জাহিদ ফারুক যে সম্পদ বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দেন, তাতে তাঁর আয় দেখানো হয়েছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৪২ টাকা। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে তিনি তাঁর আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৮ টাকা। সে হিসাবে তাঁর গত পাঁচ বছরে আয় বেড়েছে প্রায় ৪০ গুণ। সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা; এবার আয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সে হিসাবে সাদিক আবদুল্লাহর আয় গত পাঁচ বছরে তিন গুণের মতো বেড়েছে।

সাদিকের আয়ের উৎস মাছ চাষ

সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর আয়ের উৎসের বড় খাত হিসেবে দেখিয়েছেন মেয়র পদের সম্মানী। এ খাতে তিনি আয় দেখিয়েছেন ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। তাঁর আয়ের আরেকটি উৎস মাছ চাষ ও রাখি মালের ব্যবসা। এ দুই খাতে তাঁর বার্ষিক আয় যথাক্রমে ৫ লাখ ও আড়াই লাখ টাকা। বাড়িভাড়া বাবদ তাঁর আয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অপর দিকে জাহিদ ফারুক তাঁর আয়ের বড় উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন পেনশন এবং সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী বাবদ পাওয়া ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা। এ ছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রির অর্থ ব্যাংক আমানত হিসেবে বিনিয়োগ করে পাওয়া মুনাফাও আছে।

দুজনের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে

দুই প্রার্থীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। ২০১৮ সালে জাহিদ ফারুকের নগদ ও ব্যাংকে অর্থ ছিল ১৫ লাখ টাকা। প্রায় ১২ লাখ টাকা দামের একটি গাড়ি ছিল তাঁর। এবারের বিবরণীতে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা ও স্থায়ী আমানত, শেয়ারে বিনিয়োগ  হিসেবে দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৪০ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৮ টাকা। এ ছাড়া প্রায় ২৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি গাড়ি আছে তাঁর। তিনি তাঁর অস্থাবর সম্পদ বাড়ার পেছনে রাজধানীর ডিওএইচএসে তিনটি প্লট ও একটি ফ্ল্যাট বিক্রির নগদ অর্থ দেখিয়েছেন।

অপর দিকে ২০১৮ সালে সাদিক আবদুল্লাহর অস্থাবর সম্পদের হিসাব ছিল নগদ ৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তাঁর একটি মাইক্রোবাস ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে তাঁর সম্পদের যে বিবরণী, তাতে নগদ অর্থ ২ কোটি ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৪ টাকা। তবে এবার তাঁর কোনো গাড়ি নেই।

জাহিদের স্থাবর সম্পদ কমলেও বেড়েছে সাদিকের

জাহিদ ফারুকের স্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরে কমেছে। ২০১৮ সালে তাঁর ঢাকার ডিওএইচএসে তিনটি প্লট ও একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবারের সম্পদ বিবরণীতে তাঁর তিনটি প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির কথা জানিয়েছেন। বর্তমানে স্থাবর সম্পদ হিসেবে তাঁর বরিশালের আলেকান্দায় নাল ও ভিটি জমি আছে। এ ছাড়া রাজধানীর বারিধারা ও কক্সবাজারে ফ্ল্যাটের উল্লেখ করেছেন। এসব সম্পদের মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা। ২০১৮ সালে প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ টাকার ঋণ থাকলেও এবার তাঁর কোনো ঋণ নেই।

২০১৮ সালে সাদিক আবদুল্লাহর স্থাবর সম্পদ হিসেবে রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউকের একটি প্লট ও গুলশান নিকেতনে একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে যে সম্পদ বিবরণী দিয়েছেন, তাতে ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মূল্যমানের অকৃষিজমি ও স্ত্রীর নামে ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৬৫ শতক জমির উল্লেখ করেছেন। গুলশান নিকেতনে তাঁর নিজের একটি ফ্ল্যাট আছে, যার মূল্য ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে যে সম্পদ বিবরণী জমা দেন তা অনেকাংশে বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, এই হিসাব কখনো নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে না বলে এটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এসব বিবরণী ইসির পক্ষ থেকে তদন্ত করার পাশাপাশি বিবরণীর সঙ্গে প্রার্থীর আয়কর দাখিলের তথ্য চাওয়া উচিত।