ঝিনাইদহে যুবলীগের এক পক্ষের হামলায় আরেক পক্ষের নেতা নিহত

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমানের স্ত্রী–সন্তানদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কাশিপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আরিফুর রহমান ওরফে আরিফ (৪৮) নামের এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১০ জন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় লোকজন বলেন, বেদেপল্লির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা।

নিহত আরিফ কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বড় ভাই রেজাউল ইসলাম ওরফে রেজা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। আরিফ গত নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। আরিফের স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বেশ কিছু দিন ধরে কাশিপুর বেদেপল্লির কর্তৃত্ব নিয়ে যুবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন মনিরুল ইসলাম, অপর পক্ষে আছেন রাসেল হোসেন। মনিরুল বর্তমান কাউন্সিলর মেহেদী হাসান ওরফে সজল আর রাসেল যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলামের মদদে চলাফেরা করেন। এই বেদেপল্লিতে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে এক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল সন্ধ্যায় আবার উত্তেজনা দেখা দেয়। সন্ধ্যায় বেদেপল্লিতে মনিরুল ও রাসেলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মনিরুলের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে।

নিহত যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান

গতকাল রাত আটটার দিকে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মেহেদী হাসান ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। সেখানেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষ ইট ছোড়াছুড়ি করলে কাউন্সিলর মেহেদীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এর কিছু সময়ের মধ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে আরিফের ওপর হামলা করেন। আরিফ তখন নিজের বাসার নিচে ফার্নিচারের দোকানের সামনে বসা ছিলেন। এ সময় তাঁকে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোরে এবং পরে সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে দিবাগত  রাত দুইটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

রাতে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন কালীগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেহেদী হাসান ওরফে সজল। আজ বুধবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ।

নিহত আরিফুরের বড় ভাই রেজাউল ইসলামের অভিযোগ, যুবলীগের একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাঁর ভাইকে হত্যা করেছে।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রেশমা খাতুনের দাবি, তাঁর স্বামী আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধের শিকার। তাঁর স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। প্রতিপক্ষের লোকজন এটা ভালোভাবে নেননি। তাঁরা তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছেন।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা আবদুর রহিম বলেন, মূলত বেদেপল্লির এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করা নিয়ে রাসেল ও মনিরুলের মধ্যে বিরোধ হয়। আদালতে তাঁরা পরস্পরের নামে মামলাও করেছে। এই বিষয় নিয়ে গতকাল নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় আরিফুর রহমান মারা যান। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা চলছে।