উঁচু-নিচু সর্পিল পাহাড়ি সড়কটিতে চলতে চলতে হঠাৎ থেমে কান পাতলেই শোনা যায় ঝিঁঝিপোকা আর বনমোরগের ডাক। সড়কের দুপাশে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, জারুল আর হরেক রকম বুনো গাছের সারি। বুনো ফুল, ফল ও লতা-গুল্মের বুনন সবখানে। সড়ক লাগোয়া পাহাড়গুলোতে গাড় সবুজের সমারোহ দেয় চোখের প্রশান্তি। এমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা মিরসরাই-নারায়ণহাট সড়ক। ঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র না হলেও সড়কের সৌন্দর্যে এখন ক্রমেই বাড়ছে পর্যটক সংখ্যা।
চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলায় মিলে মিরসরাই-নারায়ণহাট সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাটে গিয়ে শেষ হয়েছে এ সড়কটি।
নির্জন পাকা সড়কটির প্রায় পুরোটাই পাহাড়ি পথ। সড়কের দুপাশেই ঘন জঙ্গল। কখনো সড়ক ছেড়ে নামলেই চোখে পড়ে পাহাড়ি ঝরনা কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে। মূলত মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার বনজীবী মানুষদের যাতায়াতের অন্যতম একটি পথ হিসেবে ব্যাবহার হতো এটি। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসহ নানা কাজে দুই উপজেলার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করেছে এ সড়ক।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে ফটিকছড়ি উপজেলার সেরছড়া বাজার পর্যন্ত সড়কটির ১২ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে কর্মজীবী মানুষ ছাড়াও বেশ কিছু পর্যটক চোখে পড়ে। সড়কের মিরসরাই অংশের চন্দ্রমল্লিকা, ছয় ভাইয়া ও ঝরঝরি ঝরনা এলাকা ঘুরেফিরে দেখছিলেন তাঁরা।
সড়কের চন্দ্রমল্লিকা এলাকায় কথা হয় সাতক্ষীরা থেকে আসা পর্যটক মো. সাইফুল্লার সঙ্গে। প্রকৌশলবিদ্যার এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দুই বন্ধু মিলে চট্টগ্রামের দ্রষ্টব্য স্থানগুলো ঘুরতে এসেছি। গত দুই দিনে বেশ কিছু জায়গা ঘোরাও হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিরসরাইয়ের পাহাড়ি এ রাস্তাটি সম্পর্কে জেনে কৌতূহলী ছিলাম। আজ এসে বেশ ভালো লাগছে। সড়কটিতে গাড়ি চলে খুব কম। প্রকৃতির শব্দ ছাড়া আর তেমন কোনো কোলাহল নেই। পথের ধারে এখানে সেখানে চোখে পড়ে নানা বুনো ফুল, ফল। পাখির কোলাহল আছে সবখানে। এখানে এলে নিসর্গের এমন অকৃত্রিম রূপ বিহ্বল করবে যে কাউকে।’
এই সড়কপথের ঝরঝরি ঝরনার কাছে ছোট একটি ঘরে ২০ বছর ধরে চায়ের দোকান চালান মো. মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘একসময় এ রাস্তায় হেঁটে যাতায়াত করত মানুষ। এখন সড়ক উন্নত হওয়ায় গাড়ি চলাচল করছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখানে এখন কমবেশি প্রতিদিন পর্যটক আসে। শুক্র ও শনিবার পর্যটক থাকে বেশি। খেয়াল করছি, দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে এখানে।’
মিরসরাই-নারায়ণহাট সড়কটির বড় একটি অংশ পড়েছে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের মিরসরাই ও বারৈইয়ারঢালা রেঞ্জের মধ্যে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ মিরসরাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহেনশা নওশাদ বলেন, মিরসরাই-নারায়ণহাট পাহাড়ি সড়কটির দুপাশে নানা প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা। সড়কটির পাশে বন বিভাগের লাগানো গর্জনগাছের সারি মনে অন্য রকম প্রশান্তি দেয়। এটি ঘোষিত কোনো পর্যটনকেন্দ্র না হলেও সড়কটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক পর্যটককে টেনে আনছে এখানে।