হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট

আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে হারিয়ে জয় পেলেন বিএনপির নেতারা

হ‌বিগ‌ঞ্জের চুনারুঘাটের উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসান ও মাধবপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এফ এ এম শাহজাহান
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও পদত্যাগকারী দুই নেতা। তাঁদের মধ্যে মাধবপুর উপজেলা পরিষদে এস এফ এ এম শাহজাহান এ নিয়ে টানা তিনবার চেয়ারম্যান হলেন। চুনারুঘাটে সৈয়দ লিয়াকত হাসান প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বলছেন, দলীয় কোন্দল ও মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মীরা কাজ না করায় তাঁরা হেরেছেন।

চতুর্থ ধাপে গতকাল বুধবার মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মাধবপুরে চেয়ারম্যান পদে জয় পাওয়া এস এফ এ এম শাহজাহান জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি  ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি তাঁকে বহিষ্কার করেছে। চুনারুঘাটে সৈয়দ লিয়াকত হাসান উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে তিনি সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মাধবপুরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন তিনজন। এর মধ্যে দুজনই আওয়ামী লীগের। তাঁরা হলেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন অসীম ও মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দ শাহ হাবিব উল্লাহ। নির্বাচনে জয়ী হন অপর প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা এস এফ এ এম শাহজাহান। তিনি ঘোড়া প্রতীকে ৬২ হাজার ২৫২ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নেতা মো. জাকির হোসেন (আনারস ) পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৫২ জন। এ দুজনের ভোটের ব্যবধান ২৪ হাজার ২০০।

সংখ্যালঘু ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া, মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মীরা দলের নেতাদের কথা না শোনা এবং প্রার্থীর টাকার অভাব পরাজয়ের মূল কারণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের মতে, তাঁদের দলীয় কোনো কোন্দল নেই। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ নন, তাঁরা কারও কথা শোনেন না। পাশাপাশি তাঁদের দলের প্রার্থীর (জাহির হোসেন)  টাকার অভাব ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মতো তিনি মাঠে টাকা না ছাড়তে পারার কারণে এই ভরাডুবি। তা ছাড়া নির্বাচনের দিন এলাকার সংখ্যালঘু ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাননি। গেলে হয়তো তাঁরা দুই হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হতেন।

তবে বিএনপি নেতা এস এফ এ এম শাহজাহানের ‘ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমেজও’ তাঁর বিজয়ী হওয়ার পেছনে কাজ করছে বলে মনে করেন মাধবপুর বাজারের ব্যবসায়ী সমিরন সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনকে ডিঙিয়ে বিএনপির নেতার জয়ের পেছনে ছিলেন এলাকার নিরপেক্ষ ও সাধারণ ভোটাররা। এস এফ এ এম শাহজাহান দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপের পরিচালক ও এলাকায় দানবীর হিসেবে পরিচিত। তিনি সব সময়ই মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। যে কারণে টানা তিনবার তিনি চেয়ারম্যান। এখানে দলীয় পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমেজের কারণে তিনি জয়ী হয়েছেন।

এ বিষয়ে এস এফ এ এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার নির্বাচন করা মানুষের জন্য। এ পদে থেকে মানুষের কাছাকাছি থাকা যায়। মানুষ আমাকে ভালোবাসে, তার প্রমাণ আবারও তারা দিয়েছে এ নির্বাচনে।’ জয়ের পেছনে তাঁর দলীয় পরিচয় নয়, পারিবারিক ইমেজ কাজ করছে।

চুনারুঘাটে থেকে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান চৌধুরী, মো. রায়হান উদ্দিন, হাবিবুর রহমান এবং বিএনপির পদত্যাগকারী নেতা সৈয়দ লিয়াকত হাসান। তাঁদের মধ্যে রায়হান উদ্দিনের পক্ষে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক (ব্যারিস্টার সুমন) ভোট চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবু তাহের তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এই অভিযোগ করেছিলেন। ঘোড়া প্রতীকে ৫২ হাজার ৮২৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন সৈয়দ লিয়াকত হাসান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের (আনারস) পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫৬২ ভোট। দুজনের ভোটের ব্যবধান ১৭ হাজার ২৬৭।

নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যারিস্টার সুমনের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হওয়া সৈয়দ লিয়াকত হাসানকে নিয়েই সর্বত্র আলোচনা। বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে চমক দেখান তিনি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল থাকায় তিনি জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া লিয়াকত হাসান এলাকায় একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি এর আগে আরও দুবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেন।

সৈয়দ লিয়াকত হাসান বলেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কারণে ও ভালো জনসমর্থনের কারণে জয়ী হয়েছেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি থাকা অবস্থায় দল থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেন।