কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা ও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় তিনজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর গতকাল রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আহত এক ছাত্রনেতা। পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি আশরাফুল ইসলাম (৫৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ওই ঘটনায় আজ রোববার দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া শাখার নেতারা। সেখানে অভিযোগ করা হয়, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে। তাদেরকে ধরতে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া শাখার মুখপাত্র পারভেজ মোশাররফ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান, সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, মুখ্য সংগঠক বেলাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়াদ ইসলাম ও হুমাইরা কবির, সদস্য সুলতান মাহমুদ ও কে এম রাইয়ানুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনিসহ কয়েকজন নেতা গতকাল সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে আয়োজিত একটি মেলায় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে স্টল পরিদর্শনের সময় কয়েকজন তরুণ তাঁকে ধাক্কা দেন। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়। এরপর তাঁরা (তরুণেরা) সংগঠিত হয়ে হামলা চালান। তাঁদের কাছে দেশি অস্ত্র ছিল। হামলায় তিনিসহ যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়াদ ইসলাম ও হুমাইরা কবির আহত হন। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়।
মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, হামলাকারীর পরিবারের সদস্যরাও হত্যার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত বলে জানতে পেরেছেন। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তা না হলে পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেক আইডি দিয়ে চরিত্র হরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। যা একদমই সত্য নয়।’
লিখিত বক্তব্যে পারভেজ মোশাররফ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও আরডিএক্রা বয়েজ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা হয়েছে। এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন আমির হামজা ও স্যাম সাদিক নামের দুই ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে আরও অন্তত ২৫ জন জড়িত ছিলেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। একটি মহল এ ঘটনার মোড় অন্যদিকে নিয়ে দোষীদের নিরপরাধ প্রমাণের চেষ্টা করছে।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য তাঁদের কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের ওপর হামলার অভিযোগে গতকাল রাতেই থানায় মামলা হয়েছে। আহত সাইয়াদ ইসলাম বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০–৩০ জনকে।
ওসি শিহাবুর রহমান আরও বলেন, গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি হামলাকারী স্যাম সাদিকের বাবা। আশরাফুল ইসলাম ছাত্রদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে তাঁকে আসামি করা হয়েছে।