টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বেশ কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও মির্জাপুর রেলস্টেশনে অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে রেললাইন অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও মির্জাপুর উপজেলাবাসীর ব্যানারে আজ শনিবার বিকেলে মির্জাপুর রেলস্টেশনে পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন ২২ মিনিট থামিয়ে রাখেন। পরে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি আজকের মতো সমাপ্ত করেছেন তাঁরা।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে মির্জাপুর রেলস্টেশনে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি পুনর্বহাল; একতা বা দ্রুতযান, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি চালু; টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন চালুকরণ এবং মির্জাপুর রেলস্টেশনে অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা চালু করা।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৩ সালের জুনে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০০৭ সালের ৭ অক্টোবরে আন্তনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা-খুলনার মধ্যে চলাচল শুরু করে। শুরু থেকেই মির্জাপুর স্টেশনে এর যাত্রাবিরতি ছিল। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ট্রেনটির যাত্রাবিরতি বন্ধ হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রাপ্ত থেকে ঢাকার মধ্যে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু করে। শুরুতে মির্জাপুর রেলস্টেশনে এর যাত্রাবিরতি না থাকলেও দুই দিন পর মির্জাপুর স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। পরে ট্রেনটি মির্জাপুরে যাত্রাবিরতি শুরু করে। গত ৪ মে গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনের এক কিলোমিটার দক্ষিণে ছোট দেওড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তেলবাহী ট্রেন ও যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এরপর টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন চলাচল বন্ধ হলেও তা আর চালু হয়নি। বর্তমানে এই পথে ১৬ জোড়া ট্রেন চললেও কেবল রাজশাহী এক্সপ্রেস (লোকাল), সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন মির্জাপুরে যাত্রাবিরতি করছে।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান ও স্টেশনমাস্টার কামরুল হাসান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দেন।
এদিকে আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে আজ বিকেল চারটা থেকে মির্জাপুর রেলস্টেশনে জড়ো হতে থাকেন। বিকেল সাড়ে চারটায় তাঁরা রেললাইনের ওপর লাল কাপড় টাঙিয়ে দেন। এরপর ব্যানার ধরে রেলপথ অবরোধ করে মানববন্ধন শুরু করেন। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে ঢাকামুখী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন মির্জাপুরে পৌঁছালে তা আন্দোলনকারীরা থামিয়ে দেন। এ সময় দাবি মানার জন্য তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে স্টেশন চত্বর মুখর করে তোলেন।
খবর পেয়ে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান ও স্টেশনমাস্টার কামরুল হাসান সেখানে যান। মাসুদুর রহমান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দিলে তাঁরা প্রায় ২২ মিনিট পর রেলপথ থেকে সরে এলে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার দিকে রওনা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মির্জাপুরের প্রধান সমন্বয়ক ইমন সিদ্দিকী বলেন, ‘২০২০ সালে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি টাঙ্গাইল, মির্জাপুর ও জয়দেবপুরে বাতিল করলেও টাঙ্গাইল আর জয়দেবপুরে যাত্রাবিরতি পুনর্বহাল করে। কিন্তু মির্জাপুরে এখনো তা চালু হয়নি। অনতিবিলম্বে চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি পুনর্বহাল, টাঙ্গাইল কমিউটার চালু, একতা বা দ্রুতযান, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি করতে হবে। না হলে আমরা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী হাবেল মৃধা বলেন, ট্রেনগুলোর যাত্রাবিরতি চালু হলে মির্জাপুরে বসবাসরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কুমুদিনী হাসপাতালে যাতায়াতকারী রোগী, ভারতেশ্বরী হোমস, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, মহেড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী এবং মির্জাপুরের গড়াই শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে কর্মরত ৪০ হাজার শ্রমিকের অধিকাংশই সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক নুরু মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে জানাতে বলেছেন।