মাদারীপুরে সোবহানের বিরুদ্ধে লড়বেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা

আবদুস সোবহান ও তাহমিনা বেগম
ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। সোবহানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মহিলা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম।

আবদুস সোবহান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ায় গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের একাংশ। এতে তাহমিনা বেগম নিজেই নেতৃত্ব দেন। বিক্ষোভ মিছিলটি দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে কালকিনির পুরানবাজার ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হয়ে সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।

এ সময় বক্তব্য দেন তাহমিনা বেগম, কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর মামুনুর রশীদ, ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদুল হাসান, কালকিনি পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশ্রাব আলী ব্যাপারী, সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার প্রমুখ।

এ সময় নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাহমিনা বেগম বলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ বয়সে আমার নির্বাচনে আসতে হবে, এটা আমার জন্য কষ্টের।...অন্যায়কারী, শোষণকারী, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ গোলাপকে আমরা চাই না। বর্তমান নৌকার মাঝি দুর্নীতিবাজ। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে কলঙ্কিত করেছেন।’

মাদারীপুর-৩ আসনে নির্বাচন করার জন্য সাতজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তবে সে তালিকায় তাহমিনা বেগমের নাম ছিল না। এখন কেন নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা বলছেন জানতে চাইলে তাহমিনা মুঠোফোনে বলেন, তিনি দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন না, প্রার্থী বিরুদ্ধে গিয়ে করবেন। অযোগ্য লোক নৌকা পাওয়ায় এর প্রতিবাদস্বরূপ নির্বাচন করবেন। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সব নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নির্বাচন করবেন।

রোববারের সভায় তৌফিকুজ্জামান শাহীন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে নেতা–কর্মীদের ওপর যদি অন্যায়-অবিচার করা হয়, তাহলে কালকিনিতে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে। কারণ, এই নির্বাচন হবে কালকিনিকে শুদ্ধ করার শেষ লড়াই।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কালকিনিবাসী গোলাপের পরিবর্তে এমপি হিসেবে তাহমিনা আপাকে চায়। আমরা বেঁচে থাকতে দুর্গন্ধ গোলাপ আর চাষ করতে দেব না।’

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহানকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। তবে তাঁর মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান সরদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভরসা ও আস্থা রেখেই আবদুস সোবহানকে নৌকা দিয়েছেন। এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা তাঁর বিপক্ষে নির্বাচন করবে কি না, তা তাঁরা নিশ্চিত নন। তবে শুনেছেন, তাহমিনা বেগম করবেন। যাঁরা আবদুস সোবহানের বিপক্ষে কথা বলছেন, তাঁরা সংসদ সদস্যের কাছ থেকে গত পাঁচ বছরে অনৈতিক কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। তাই তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে এসব কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর-৩ আসনের জন্য উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম এককভাবে প্রস্তাব করা হয়। পরে এই আসনের জন্য তাঁর পক্ষে নেতা-কর্মীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া এ আসনের জন্য বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান, কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ভাই সৈয়দ আবুল হাসানসহ সাতজন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তবে দল আবদুস সোবহানকেই মনোনীত করে। আর বাহাউদ্দিন নাছিমকে দেওয়া হয় ঢাকা-৮ আসন।