নিহত যুবলীগ কর্মী আলী হোসেন
নিহত যুবলীগ কর্মী আলী হোসেন

যশোরে যুবলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা, চার দিনেও গ্রেপ্তার হননি কেউ

যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার তেঁতুলতলা মোড়ে যুবলীগ কর্মী আলী হোসেনকে (৩০) গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে নিহত আলী হোসেনের মা আঞ্জু আরা বেগম বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলাটি করেন।

মামলায় স্থানীয় ব্যবসায়ী নবাব হোসেনকে (৫৫) প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৫ থেকে ৭ জনকে। আজ সোমবার হত্যাকাণ্ডের চার দিনেও ঘটনার জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রধান আসামি নবাব হোসেনর ভাই সিরাজ, পাঁচবাড়িয়া গ্রামের একরামুল (৪৫), বাহাদুরপুর গ্রামের টোকন (৪৫), চাঁচড়া ভাতুড়িয়া গ্রামের ইসরাজুল (২৫) ও কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের এনামুল শেখ (২৮)। আসামি দুই ভাই নবাব ও সিরাজ যশোর সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পূর্বশত্রুতার জেরে নবাব হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা গুলি করে আলী হোসেনকে হত্যা করেছেন। কী শত্রুতা ছিল, মামলায় তা উল্লেখ করা হয়নি। গতকাল রাত ১২টার দিকে মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিরা সবাই পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

নিহত আলী হোসেন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি সদর উপজেলা বাহাদুরপুর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শহর থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফেরার পথে বাহাদুরপুর এলাকার তেঁতুলতলা মোড়ে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা গুলি করে আলী হোসেনকে হত্যা করে। একটি মোটরসাইকেলে করে আলী হোসেন, তাঁর সহযোগী সোহান হোসেন ও নয়ন একসঙ্গে বাড়িতে ফিরছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সোহান হোসেন বলেন, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি মোটরসাইকেলে করে দুজন আমাদের মোটরসাইকেলের পেছনে এসে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। প্রথম গুলির শব্দে আমরা মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই। এরপর এক মিনিটের মধ্যে আলী হোসেন ভাইয়ের পা, পিঠ ও মাথায় পাঁচটি গুলি করে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই আলী ভাই মারা যান।’

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা জানা যায়, ৫ জুন অনুষ্ঠিত যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন তৌহিদ চাকলাদার। তাঁর কর্মী ছিলেন আলী হোসেন। নির্বাচনে বিজয় উপলক্ষে ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাতে উপশহর ই-ব্লক এলাকায় প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজন শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা আলী হোসেনের মাথা ও পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে তিনি মারা যান।

পরিবারের লোকজনের দাবি, দুটি কারণে আলী হোসেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। প্রথম কারণ, আলী হোসেন মাটির ব্যবসা করতেন। ব্যবসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে পাশের কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের নবাব হোসেনের বিরোধ ছিল। মূলত নবাবের ভাই সিরাজ, আলী হোসেনসহ কয়েকজন ভৈরব নদের মাটি ও বালু তুলে ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসা নিয়ে সিরাজ ও আলী হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। নবাব ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে আলী হোসেনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। দ্বিতীয় কারণ হলো, সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে নবাব ও আলী হোসেন দুজন দুটি পৃথক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছেন। আলী হোসেন বিজয়ী প্রার্থী তৌহিদ চাকলাদার ও নবাব পরাজিত প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ারের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।

পুলিশ বলছে, নিহত আলী হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁচড়ার আলোচিত ইমরোজ হত্যা, মাদক, মারামারি ও দ্রুত বিচার আইনে চারটি মামলা রয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, আলী হোসেনের অতীত রেকর্ড ভালো নয়। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আলী হোসেনের বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘আলী হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা ও মারামারির দুটি মামলার কথা আমরা জানি। সে এলাকার মানুষের উপকার করত। এলাকার চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনার সালিস-মীমাংসা করত। সঙ্গ দোষে ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে কিছু দোষত্রুটি থাকতে পারে।’