প্রতিযোগিতায় জয়ের লক্ষ্যে ঘোড়াগুলো ছুটে চলেছে। গতকাল বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার
প্রতিযোগিতায় জয়ের লক্ষ্যে ঘোড়াগুলো ছুটে চলেছে। গতকাল বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার

প্রাণপণে ছুটছিল ২৮টি ঘোড়া, হর্ষধ্বনিতে মুখর চারপাশ

মাঠ থেকে আগেই কেটে নেওয়া হয়েছে ধানসহ অন্য ফসল। বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হুট করেই নেমে আসে শীতের বিকেলের নরম রোদ। সেখানে এই সোনা রোদ গায়ে মেখে ভিড় করেন কয়েক হাজার দর্শক। সবার দৃষ্টি মাঠের মাঝের অংশে। বিশেষভাবে চিহ্নিত ফাঁকা অংশের মধ্য দিয়ে প্রাণপণে ছুটছে ঘোড়া। তা–ও আবার একটি-দুটি নয়, গুনে গুনে ২৮টি। ঘোড়দৌড়ের এ আয়োজনে মুহূর্তেই উপস্থিত দর্শকদের হর্ষধ্বনি ও করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।

গতকাল বুধবার বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন ফসলি জমির মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতা। এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে গোবিন্দপুর গ্রামবাসী। তাঁরাই মূলত এ আয়োজনের উদ্যোক্তা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেলা তিনটায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। এর আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের গ্রাম থেকে মাঠে আসতে শুরু করেন স্থানীয় দর্শকেরা। খেলা শুরুর আগে গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন ফসলি মাঠ ভরে যায়। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হলে দর্শকের হর্ষধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। প্রতিযোগিতা শেষ হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়।

এবারের প্রতিযোগিতায় নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি বগুড়া, জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৮ জন ব্যক্তি ২৮টি ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। মূলত এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই ঘোড়াগুলো পোষেন তাঁরা। এমনটাই জানান নওগাঁর ধামইরহাট থেকে ঘোড়া নিয়ে আসা সেকেন্দার আলী। তাঁর ঘোড়াটি নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় আল আমিন নামের এক কিশোর।

সেকেন্দার বলেন, ‘১০ বছর ধরে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিচ্ছি। যেইখানে ঘোড়দৌড়ের খবর পাই, সেইখানে ছুটে যাই। আয়োজকেরাও খবর দেন। এটা আমার একটা শখ। আমার ঘোড়ার সওয়ার হিসেবে অধিকাংশ সময় আল আমিনই অংশ নেয়। কখনো কখনো অন্য ছেলেও সওয়ার হয়।’

প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয় ধামইরহাটের সেকেন্দার আলীর ঘোড়া, দ্বিতীয় মান্দার পরানপুর এলাকার সাইফুল ইসলামের ঘোড়া এবং তৃতীয় হয়েছে বগুড়ার ধুনটের আলী হোসেনের ঘোড়া। অন্যদিকে ‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে মান্দার ফারুক হোসেনের ঘোড়া, ধামইরহাটের মাহাবুবের ঘোড়া দ্বিতীয় ও সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা এলাকার মিলনের ঘোড়া তৃতীয় হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারী ঘোড়সওয়ারকে টেলিভিশন, দ্বিতীয়জনকে স্মার্টফোন ও তৃতীয় ঘোড়সওয়ারকে রাইস কুকার উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ঘোড়সওয়ার পেয়েছেন নগদ দুই হাজার টাকা সম্মানী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক আহ্বায়ক আবদুল মতিন। প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকলেছুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।