১৬ দিন আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন তানজিনা আক্তার ও এমরান হোসেন। বিয়ের পর প্রথমবার ভগ্নিপতিসহ বোনকে ঢাকার মিরপুরের বাসায় দাওয়াত দেন বড় বোন। ওই দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে ঘটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় তিনজনের একটি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এমরান হারিয়েছেন তাঁর নববিবাহিত স্ত্রীকে। আরেক দম্পতি হারিয়েছেন তাঁদের একমাত্র সন্তানকে।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে নরসিংদীর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দগরিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস কেটে চালকসহ আটজনকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে চারজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে এবং আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
নিহত পাঁচজন হলেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪৫), তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার (৩৫), ছেলে সাজিদ (১২), ভাতিজি তানজিনা আক্তার (২৪) ও ভাতিজা সাদ্দাম মিয়ার মেয়ে ছাবিহা (১৪)।
হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, ১৬ দিন আগে তানজিনার সঙ্গে পাশের গ্রামের এমরান হোসেনের বিয়ে হয়। তানজিনার বড় বোন ইশিকা ঢাকার মিরপুরে থাকেন। তাঁদের বাসায় দাওয়াত খেতে দুটি মাইক্রোবাসে করে নবদম্পতিসহ পরিবারটির ১৪ জন সদস্য ঢাকায় গিয়েছিলেন। দাওয়াত খেয়ে রাতে তাঁরা রায়পুরার বাড়িতে ফিরছিলেন। নবদম্পতিকে বহন করা মাইক্রোবাসটি রাত সোয়া নয়টার দিকে নরসিংদীর দগরিয়া এলাকা অতিক্রমের সময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা একটি সিমেন্টবাহী কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুমড়েমুচড়ে গিয়ে মাইক্রোবাসে থাকা আটজন গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।
মাইক্রোবাসটির মালিক আনোয়ার হোসেন দুর্ঘটনার সময় চালকের আসনে ছিলেন। নবদম্পতি এমরান ও তানজিনা ছাড়াও আনোয়ারের স্ত্রী কামরুন নাহার ও একমাত্র ছেলে সাজিদ ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন আনোয়ারের ভাতিজা প্রবাসী সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী লিপি আক্তার ও তাঁর মেয়ে ছাবিহা, ভাতিজা মুজিবুর রহমানের মেয়ে মিতু আক্তার।
স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাইক্রোবাস কেটে তাঁদের উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তানজিনা, কামরুন নাহার, সাজিদ ও ছাবিহা মারা যান। গুরুতর আহত আনোয়ার, এমরান, লিপি ও মিতুকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক। আজ ভোর সোয়া চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়।
আজ দুপুরে আবদুল্লাহপুর গ্রামে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজনের লাশবাহী দুটি ফ্রিজিং গাড়ি বাড়ির আঙিনায় রাখা। আশপাশের এলাকার নানা বয়সী মানুষ শেষবারের মতো লাশ দেখতে এসেছে। মুখে একাধিক ব্যান্ডেজ নিয়ে আহত এমরানও এসেছেন স্ত্রী তানজিনাকে শেষবারের মতো দেখতে। বেলা তিনটার দিকে স্বজনেরা তাঁদের লাশ পাশের আবদুল্লাহপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নেন। সেখানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।
আলাউদ্দীন ও মাসুদ মিয়া নামের দুই স্বজন জানান, এক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান মারা গেল, আনোয়ারের পরিবারটি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। এমরান হারালেন তাঁর নববিবাহিত স্ত্রীকে আর প্রবাসী সাদ্দাম হারালেন তাঁর একমাত্র মেয়েকে। এমন শোক সহ্য করা কঠিন।
ইটাখোলা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। স্বজনদের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ।