কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র
কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কটিয়াদীতে সংসদ সদস্যের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সালিস পণ্ড

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় সালিস চলাকালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে করগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নতুন করে সংঘাত এড়াতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম মোল্লা ও একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাহাবুবুর রহমানপক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সালিস পণ্ড হয়ে যায়। এর পর থেকে পক্ষ দুটির লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।

সালিসে কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জে-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন মো. আলী আকবর, জনপ্রতিনিধি ও আসন্ন উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সালিস বসে করগাঁও হাইস্কুল মাঠে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন।

চেয়ারম্যান নাদিম মোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর বাড়ি করগাঁও গ্রামে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান হন। অন্যদিকে ইউপি সদস্য মাহাবুবুর রহমানও আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর বাড়ি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য ভাট্টা গ্রামে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করগাঁও ইউনিয়নের সেলিম মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছে টাকা পান ঢাকার এক ব্যবসায়ী। পাওনাদারের হয়ে রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে করগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান নাদিম মোল্লার ভাতিজা ফাহাদ মোল্লা সেলিমের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাজা মিয়ার উপস্থিতিতে সালিস হয়। সালিস বসে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরমান মিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। কিন্তু ওই সালিসে বিষয়টির মীমাংসা হয়নি। ফাহাদ মোল্লার ধারণা, সেলিমের পক্ষ নেন আরমান। এ নিয়ে আরমানকে গালমন্দ করেন ফাহাদ। বিষয়টির প্রতিবাদ করেন ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহাবুবুর রহমান। এরপর ফাহাদের লোকজনের ক্ষোভ বাড়ে মাহাবুবুর রহমানের প্রতি। কয়েক দিন পর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের সভা বসে। সভা শেষে বাড়িতে ফেরার সময় ফাহাদ লোকজন নিয়ে মাহাবুবকে মারধর করেন।

এ ঘটনার সূত্র ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নিরসনে গতকাল সালিস হয়। সালিসে পুলিশ রাখা হয়। উভয় পক্ষের কথা শোনার একপর্যায়ে চেয়ারম্যানপক্ষের লোকজন হইচই শুরু করেন। পরে উভয় পক্ষ চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু করে। সংঘর্ষে চেয়ারম্যানপক্ষের বাবু লাল, জিল্লুর রহমান, আঙ্গুর মিয়া ও আবু মিয়া আহত হন। মাহাবুবপক্ষের আহত হন জিল্লুর রহমান, গণি মিয়া ও ইব্রাহিম মিয়া। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

চেয়ারম্যান নাদিম মোল্লা বলেন, ‘বিষয়টি শেষ করতেই সালিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু মানুষ আমাকে পরিকল্পিতভাবে সালিসে হেয় করার চেষ্টা করছিলেন। বুঝতে পেরে আমার পক্ষের লোকজন প্রতিবাদ করে। তখন ঝামেলার সৃষ্টি হয়।’

ইউপি সদস্য মাহাবুবুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে, সবকিছুতেই চেয়ারম্যানের ইন্ধন আছে। আমাকে চেয়ারম্যানের ভাতিজা পরিষদের মাঠে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। অথচ চেয়ারম্যান একটুও প্রতিবাদ করেননি। এমনকি সালিসে গিয়েও অনমনীয় আচরণ দেখান।’

সালিসের সভাপতি সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘একটি ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা ও অচলাবস্থা দেখা দেয়। এ কারণেই আমরা উদ্যোগী হয়ে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যানপক্ষের লোকজনের অনমনীয় মনোভাবের কারণে সালিস পণ্ড হয়ে গেল।’

সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি বলে তিনি জানান।