আ.লীগ প্রার্থীর ভোট কমেছে, সেই ভোট গেল কোথায়

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওদুদ
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওদুদ ৫৯ হাজার ৬৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি প্রার্থী সামিউল হক (লিটন) পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৯৮০ ভোট। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ওদুদ প্রায় ৮৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভোট কেন কমেছে, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এ বিষয়ে আবদুল ওদুদের দাবি, দলের অনেক নেতা ভেতরে–ভেতরে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এ কারণে তাঁর ভোট কমেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ–৩ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হারুনুর রশীদ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ভোট। বাকি প্রায় পৌনে তিন লাখ ভোট আওয়ামী লীগ, অন্য প্রার্থী ও অনুপস্থিত ভোটারদের। এই নির্বাচনে গড় ভোট পড়েছে ২৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওদুদ গত নির্বাচনের চেয়ে প্রায় ২৬ হাজার ভোট কম পেয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। উপনির্বাচন বলে মানুষের আগ্রহ ছিল কম। এখন ধান রোপণের মৌসুম, সর্ষে কাটার সময়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ এই সময় মাঠের কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে ভোট দিতে আসাটা তাঁদের কাছে খুব গুরুত্ব পায় না। তাঁর মতে, বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের ১০ শতাংশ, জামায়াতের ১০ শতাংশ ও বিএনপির ৮০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকতে দলের লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে কেন ভোট দিতে গেলেন, এ প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওদুদ বলেন, দলের কয়েকজন নেতা নেপথ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমানসহ কয়েকজন এই নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীকে দলের প্রার্থী করার জন্য বলেছিলেন। এ কারণে তাঁরা তাঁর (ওদুদ) মনোনয়ন মেনে নেননি। আড়ালে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তাঁরা। এ কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী দলের ১০ শতাংশ ভোট টানতে পেরেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মোখলেসুর রহমানকে কল করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অন্য একজনের জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। যাঁকে দিয়েছে, তাঁর পক্ষেই দলবল নিয়ে আমরা কাজ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, কেউ যদি নির্বাচনে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তোলেন যে তাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন, তাহলে সেটা হবে পুরোপুরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর কথা।

নির্বাচনের দিন সকালে একটি ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুপুরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিদ্রোহী প্রার্থী সামিউল হকের বাড়ির সামনের নির্বাচনী কার্যালয় নৌকার সমর্থকেরা ভাঙচুর করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোট দিতে যাওয়ার পরিবেশ ছিল না। তবে আজ বৃহস্পতিবার বারবার তাঁর মুফোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল ধরেননি।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে নিজস্ব বিশ্লেষণ করেছেন এই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি অভিযোগ করেন, দলীয় সরকারের অধীন যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, তা আবারও প্রমাণিত হলো গতকালের উপনির্বাচনে। আগে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কারচুপি হয়েছে। এবার হলো স্মার্ট পদ্ধতিতে। এটা নির্বাচনের নতুন মডেল।

আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ায় নিজ বাসভবনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, যেসব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হকের পক্ষে কাজ করছিলেন, নির্বাচনের আগে তাঁদের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই। তাদের সেটা বলা হলেও নীরব থেকেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁর ভাষ্য, ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউলের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন, তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁকে রক্ষা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালিয়েছে। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ভোটকেন্দ্রে যাননি। শেষ মুহূর্তে এসব ঘটিয়ে কোনোমতে অল্প ব্যবধানে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।