নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ (বিএমএস) বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রেখে পরীক্ষা পাসের সনদ (ডিগ্রিতে) পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর প্রশাসনিক ভবনের ফটকে অবস্থান নেন।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। ডিগ্রি পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ৫৭ দিন ধরে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের ক্লাস বন্ধ।
বাংলাদেশে ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল্যাহ আল মামুন বলেন, সকালে বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা দেন এবং সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. আবদুল বাকি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডেকে নেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে অবগত করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্রছাত্রীরা চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রেখে ইতিহাস অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের নামে তাঁদের ডিগ্রি বা পরীক্ষা পাসের সনদ দেওয়ার দাবি জানান। এ দাবিতে তাঁরা গত ২১ মে থেকে ক্লাস বর্জন করছেন।
বাংলাদেশে ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ (বিএমএস) বিভাগের চেয়ারম্যান দিব্যদ্যুতি সরকার বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুটি কমিটি গঠন করেছেন। একটি কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, আরেকটি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি। কমিটি দুটি থেকে করা সুপারিশ একত্র করে তা প্রস্তাব আকারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে। সেই আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ইউজিসিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই চিঠিতে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি মোটেই প্রতিফলিত হয়নি। এ জন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গঠিত দুটি কমিটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসে আলোচনার পর প্রায় অভিন্ন সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছে। সেটা আমলে না নিয়ে উপাচার্য নিজের খেয়ালখুশিমতো ইউজিসিতে একটি চিঠি দিয়েছেন। এটা তাঁর হটকারী সিদ্ধান্ত। এতে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবদুল বাকীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রক্টর ইকবাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ (বিএমএস) বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে একই দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের মানববন্ধন ও ফটকে তালা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্রুত এ বিষয়ে একটি সমাধানের পথ বের করার আশ্বাস দিয়েছেন।