বিএনপির বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে উপজেলা বিএনপি। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নান ও সাধারণ সম্পাদক কে এম বশির উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। দলীয় প্যাডে এই বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা এবং আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। তবে গুঞ্জন উঠেছিল, তিনি তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হবেন।
একরামুজ্জামান মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব, এটা জানতে পেরে বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করেছে। তবে বিএনপির এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। এটা (নির্বাচন করা) আমার একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই নির্বাচনে যাচ্ছি।’
বুধবার অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে একরামুজ্জামান কল ধরেননি।
এর আগে একরামুজ্জামান ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। একই আসনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করেন। এই দুবারও তিনি পরাজিত হন। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে একরামুজ্জামান গত সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
আবদুল হান্নান একরামুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়টি প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একরামুজ্জামানকে উপজেলার সব জায়গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তাঁরা। তিনি একরামুজ্জামানের সমালোচনা করে বলেন, একরামুজ্জামান দলের নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। বছরের পর বছর তিনি ঢাকায় পড়ে থাকতেন। একবার তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। এখন ক্ষমতার লোভে অন্যদিকে পা বাড়িয়েছেন। নির্বাচনে উপজেলার অঙ্গসংগঠনের কেউ তাঁর সঙ্গে যাবে না।
বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের কারণে দলীয় নেতা-কর্মীরা হয়তো প্রকাশ্যে কয়েক দিন তাঁর পক্ষে নামবেন না। কয়েক দিন ক্ষোভ দেখাবেন। কিন্তু একটা সময় পর অধিকাংশ দলীয় নেতা-কর্মী তাঁর পক্ষে মাঠে কাজ করবেন। কারণ, এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলের বাইরেও তিনি এলাকার অনেক মানুষকে সহযোগিতা করছেন। কর্মের সংস্থান করেছেন।
নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, এই আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ছায়েদুল হকের (সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী) অনুসারীদের সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনের অনুসারীদের বিরোধ রয়েছে। নির্বাচনে ছায়েদুল হকের অনুসারীদের সমর্থন পাবেন একরামুজ্জামান।