‘চায়ের রাজধানী’ খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঈদের দিন ও এর পরের কয়েকটা দিন চা-বাগানসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের ভিড় লেগে থাকে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। বৃষ্টির কারণে ঈদের পরদিন থেকে দর্শনীয় স্থানগুলো প্রায় ফাঁকা। এমনিতেই এবার পর্যটক কম এসেছেন, তার ওপর সারা দিন বৃষ্টি হওয়ায় পর্যটকেরা হোটেল-রিসোর্ট থেকে বের হতে পারছেন না।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে শ্রীমঙ্গলে। সেই সঙ্গে সিলেটের বন্যার প্রভাব পড়েছে। অনেকেই সিলেটের বন্যার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলকে মিলিয়ে আগাম বুকিং বাতিল করে দিচ্ছেন। তবে শ্রীমঙ্গলের কোথাও বন্যা নেই বলে জানিয়েছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসেছেন ফিরোজ কবির। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই রিসোর্ট থেকে বের হতে পারেননি। ফলে রিসোর্টেই সারা দিন কাটাতে হয়েছে। বৃষ্টি উপভোগ করলেও ভালো করে ঘুরতে পারেননি।’
ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক পর্যটক বলেন, নিজস্ব গাড়ি থাকায় গতকাল সকালে শ্রীমঙ্গল ঘুরতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে গাড়ি থেকে নামতে পারেননি। এক ঘণ্টার মতো গাড়ি নিয়ে ঘুরে আবার রিসোর্টে ফিরতে হয়েছে। এমন বৃষ্টি জানলে আসতেন না।
শ্রীমঙ্গলে চারদিকে সবুজের সমারোহে সজ্জিত সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। চা-বাগান ছাড়াও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, বধ্যভূমি-৭১, চা-কন্যা ভাস্কর্যসহ নানা স্থান ঘুরে দেখেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। শহর থেকে একটু দূরে লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী পল্লি, সুদৃশ্য জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ ও হরিণছড়া গলফ মাঠ ঘুরে আনন্দ উপভোগ করেন তাঁরা। শ্রীমঙ্গলের পাশের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, পদ্মা লেক পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রকৃতির টানে তাই পর্যটকেরা ছুটে আসেন এই চায়ের রাজ্যে। তবে এবার শ্রীমঙ্গল ঘুরতে এলেও এসব স্থানের বেশির ভাগ যেতে পারছেন না পর্যটকেরা।
লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এমনিতেই পর্যটন অনেক কম। লেমন গার্ডেনসহ বেশির ভাগ রিসোর্টে ৫০ শতাংশের কম কক্ষ বুকিং হয়েছে। বৃষ্টির কারণে পর্যটকেরা রিসোর্ট থেকে বের হচ্ছেন না।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত ঈদের আগের দিন থেকে সপ্তাহব্যাপী পর্যটক শ্রীমঙ্গলসহ পুরো জেলায় ঘুরে বেড়ান। তাঁদের জন্য প্রতিটি হোটেল-রিসোর্টকে নতুন সাজে সজ্জিত করে রাখা হয়। পর্যটকদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয়। বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট হাউসফুল থাকে। কিন্তু এ বছর ঈদের আগের দিন থেকে এখন পর্যন্ত খুবই কম বুকিং হয়েছে। বৃষ্টির কারণে পর্যটকেরা এখানে এসেও ঘুরতে পারছেন না। এতে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সেলিম আহমেদ আরও বলেন, সিলেটে বন্যা হচ্ছে, অনেকেই মনে করছেন শ্রীমঙ্গলেও বন্যা। এ কারণে অনেক পর্যটক বুকিং বাতিল করে দিচ্ছেন। কিন্তু শ্রীমঙ্গলে তো কোনো বন্যা নেই। অনেকেই দুই দিন থাকার কথা থাকলেও একদিন থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।