নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খতনা করার সময় অসাবধানতাবশত অতিরিক্ত কর্তন ও রক্তক্ষরণের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুটি (৮) বাড়িতে ফিরেছে। ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে তাকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বেলা দুইটার দিকে শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যান মা–বাবা।
এদিকে খতনার সময় রক্তক্ষরণের ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত বুধবার সিভিল সার্জনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা বিজয় কুমারের (স্যাকমো) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ও শিশুটির চিকিৎসার তত্ত্বাবধানকারী মো. সাইফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, খতনা করানোর সময় অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ হওয়ায় আজ সকালে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এক মাসের ওষুধ লিখে দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড শিশুটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে শিশুটির বাবার দাবি, ছেলে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। পুরুষাঙ্গের ওপরের ক্ষত শুকালেও ভেতরে ক্ষত থেকে গেছে। এ কারণে একটু এদিক-সেদিক হলেই ব্যথা পাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক মাসের ওষুধ লিখে দিয়েছে। এক মাস পর আবার নিয়ে যেতে বলেছে। এই এক মাস ছেলে বাড়িতে বিশ্রামে থাকবে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিশুটিকে খতনা করানোর ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জের স্যাকমো বিজয় কুমারের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তিনি স্বীয় দায়িত্বের বাইরে আগ বাড়িয়ে ওই শিশুর খতনা করানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে প্রতিবেদনে।
সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত স্যাকমোকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, শিশুটি আজ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে শিশুটিকে নিয়মিত ফলোআপ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খতনা করানোর জন্য শিশুটিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। স্বজনেরা জানান, উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসা সহকারী শিশুটির খতনা করেন। খতনার সময় পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের অতিরিক্ত কেটে ফেলা হয়। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে ওই কর্মকর্তারা পালানোর চেষ্টা করেন। শিশুটির চিৎকার শুনে অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকেরা গিয়ে শিশুটির রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন। পরদিন শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে স্থানান্তর করা হয়।