বড় ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে একা হাতে সংসার সামলেছেন। ছোট ছেলে দীলিপ রায়কে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন মা তুফানী বালা। দীলিপকে ভর্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর লেখাপড়া শেষের পথে। কিন্তু সাপের কামড়ে দীলিপ মারা গেলেন। দীলিপের মৃত্যুর পর তুফানী বালার স্বপ্নও চুরমার হয়ে গেছে। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি।
তুফানী বালার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের ভেদাইল গ্রামে। দীলিপের কাকা চন্দ্র কান্ত রায় আজ মঙ্গলবার জানান, ঈদের ছুটিতে দীলিপ বাড়িতে আসেন। গত শনিবার রাতের খাবার শেষে নিজ ঘরের বিছানায় বসে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি বিষধর সাপ তার বাঁ হাতের আঙুলে কামড় দেয়। পরিবারের লোকজন দিলীপকে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ঝাড়ফুঁকে কোনো ফল না হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন রোববার বিকেলে স্থানীয় শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুফানীর তিন সন্তান। মেয়ে সুচিত্রা রায় সবার বড়। তিনি সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। আর বড় ছেলে রণজিৎ রায় ছোট থেকে মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি মারা যান। এরপর স্বামী ভোগীরাম মারা যান। সংসার একা হাতে সামলে ছোট ছেলে দীলিপ ও মেয়ে সুচিত্রাকে বড় করতে থাকেন তুফানী। দীলিপ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের স্নাতকের (সম্মান) ছাত্র ছিলেন। আগামী বছরই দীলিপের পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সোমবার সকালে চন্দ্র কান্ত রায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি দীলিপদের বাড়িতে ছিলেন। চন্দ্র কান্ত ফোন তুফানীর কাছে নিয়ে গেলে শোনা যায় তাঁর বিলাপ। ‘বাবা তুইও চলে গেইলো। অ্যালা হামাক কায় দেখিবে?’ সে সময় চন্দ্র কান্ত বলেন, তাঁর বউদি কান্নাকাটি করছেন। প্রতিবেশীরাও তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাতেই কাজ হচ্ছে না।
দীলিপের বড় বোন সুচিত্রা রায় বলেন, ‘মা-বাবা আর দুই ভাই নিয়ে আমরা ভালোই ছিলাম। ২০১৫ সালে আমার পরের ভাইটি মারা যায়। ক্যানসারে ২০১৮ সালে বাবাও মারা যান। সে সময় দীলিপ এসএসসি পরীক্ষার্থী। আমরা সেই থেকে দীলিপকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। এসএসসিতে দীলিপ সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পায়। এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হয় দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। কিন্তু লেখাপড়া শেষ করতে পারল না ও।’
সুচিত্রা আরও বলেন, ‘বাড়ির সবকিছু দীলিপই খোঁজখবর রাখত। মাও দীলিপের ওপর ভীষণ ভরসা করতেন। তাকে হারিয়ে মা এখন পাগলপ্রায়। মাকে কী বলে সান্ত্বনা দেব, ভাবতে পারছি না।’
রানীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরৎ চন্দ্র রায় বলেন, দীলিপ অনেক ভালো ছেলে ছিলেন। ছেলেকে হারিয়ে দীলিপের মা একা হয়ে গেলেন।