সড়কের পাশে টানানো ব্যানারে বড় করে লেখা ‘বিনা লাভের মাছের বাজার’। সামনে চওড়া টেবিলের ওপর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ স্তূপ করে রাখা। সেখানে ক্রেতা ও উৎসুক মানুষের জটলা। কেউ মাছের দাম জিজ্ঞাসা করছেন, কেউ কিনে নিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারমূল্যের চেয়ে দাম অনেকটাই কম। অন্যদিকে মাছ কেনার পর কুপন তুলে মিলছে নানা খাবারও।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের বাছিরপুর এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গতকাল রোববার বিকেলে এই দৃশ্য দেখা যায়। বিএনপির সংগঠন কৃষক দলের পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন কমিটির ব্যানারে এ বাজার স্থাপন করা হয়।
গতকাল বেলা তিনটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাঝারি আকারের মলা, ছোট-বড় রুই, মৃগেল, পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কানলা মাছ রাখা ছিল। আয়োজকেরা ক্রেতাদের পছন্দের মাছ ওজন করে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁদের একজন টাকা গুনে বাক্সে রাখছিলেন। সেখানে একটি প্লাস্টিকের বয়ামে কাগজের ছোট ছোট টুকরার কুপন রাখা ছিল। ক্রেতারা কুপন তুলে চা, শিঙাড়া, পান, চকলেট, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাবারসামগ্রী পাচ্ছিলেন।
রফিক মিয়া নামের একজন সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছিলেন। তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। সম্প্রতি দুবাই থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, রুই ও মৃগেল ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এখানে প্রতি কেজি পাঙাশ ১৫৫ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, রুই ও মৃগেল ২৮০ টাকা, মলা ১৫০ টাকা ও কানলা মাছ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ কিনতে আসা আমতৈল এলাকার বাসিন্দা মুহিবুর রহমান বলেন, ‘শনিবার রাতে বাজার বসবে বলে মাইকিং হয়েছে। তাই চলে এলাম। ৩ কেজি রুই, ৪ কেজি পাঙাশ আর ১ কেজি মখা (মলা) কিনেছি। বাজারের চেয়ে দাম কম, মাছও তাজা। ভালো উদ্যোগ।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ফরিদ মিয়া ৭৫ টাকা দিয়ে আধা কেজি মলা কেনেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। গরিবের খাইয়া বাঁচি থাকাই কঠিন। সারা দিন ভাড়ায় রিকশা চালাই। এইখানে কম দরে মাছ বেচতে দেখলাম। তাই কিনি নিলাম।’
বাজারের কর্মীরা বলেন, ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য কুপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজারে গেলে লোকজন কেনাকাটার ফাঁকে চা-পানসহ নানা খাবার খান। এখানে কুপন তুলে বিনা মূল্যে খাবার পাওয়া যায়।
কৃষক দলের ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল মিয়া এ বাজারের মূল উদ্যোক্তা। তাঁর একটি মাছের খামার আছে। এই বাজারের মাছ ওই খামারেরই। হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, খামারে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। এখানে যে দরে মাছ বিক্রি করছেন, একই দরে মৎস্যজীবীদের কাছেও বিক্রি করেন। মৎস্যজীবীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এ কারণে উপজেলা সদরের মাছ-সবজির বাজার থেকে কিছু দূরে তাঁরা এ বাজার বসিয়েছেন। তিনি বলেন, গতকাল রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় ২০০ কেজি মাছ বিক্রি হয়েছে। সকালের দিকে মানুষের ভিড় বেশি ছিল।