বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিকেরা বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন
 ফাইল ছবি

রাজশাহীতে টেলিভিশনে লাইভ চলাকালে দুই সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রশীদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। গতকাল সোমবার রাতে নগরের রাজপাড়া থানায় এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব মামলাটি করেন।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, মারধর, ক্যামেরা ভাঙচুর, টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে এটিএন নিউজের সাংবাদিক বিএমডিএর সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে অভিযুক্ত করেছেন এই সাংবাদিক। তাঁরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএমডিএর ভান্ডাররক্ষক মো. জীবন (৪২), পিয়ন মো. সেলিম (৪১), প্রধান নির্বাহীর ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল ইসলাম (৪৫), আনসার সদস্য মো. এনামুল (৩৬), বিএমডিএর পিয়ন ফারুক (৪০) ও গাড়িচালক আবদুস সবুর (৪২)।

এর আগে সোমবার সকাল সোয়া আটটার দিকে রাজশাহী বিএমডিএ কার্যালয় থেকে টেলিভিশন লাইভ চলাকালে এটিএন নিউজের রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরা পারসন রুবেল ইসলামের ওপর হামলা করা হয়। এতে দুজন আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।

মামলার এজাহারে বুলবুল উল্লেখ করেছেন, সোমবার সকাল পৌনে আটটার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনি ও তাঁর ক্যামেরা পারসন রুবেল ইসলাম বিএমডিএ রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি ও রুবেল অপেক্ষা করে সকাল ৮টা থেকে ভিডিও ফুটেজ নিতে শুরু করেন। এরপর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে সেখানে এসে গাড়ি থেকে নামেন বিএমডিএর প্রধান নির্বাহী আবদুর রশীদ। তিনি উত্তেজিত ও রাগান্বিত হয়ে তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন এবং তাঁকে ধাক্কা দিয়ে অন্যদের হুকুম দেন, এই সাংবাদিকদের যেন মেরে-পিটিয়ে বিএমডিএর কার্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর গালিগালাজ করেন ও মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ সময় লাইভ শুরু হয়। তখন ক্যামেরা পারসনের কাছ থেকে ক্যামেরা নিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। হাতুড়ি দিয়ে ক্যামেরা পারসনের মাথায় ও ডান কানে আঘাত করা হয়। তাঁকে কিল–ঘুষি মারা হয়। ক্যামেরা পারসনের মুখে ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করা হয়। এমনকি তাঁর গলা চেপে ধরে বুকে, পিঠে এলোপাতাড়ি লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। তাঁদের কাছে থাকা টাকাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে অন্য সংবাদকর্মীরা এসে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যান।

হামলার প্রতিবাদে গতকাল বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিকেরা বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিএমডিএর চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

বেলা আড়াইটার দিকে আখতার জাহান জানান, তাঁরা অভিযুক্ত ভান্ডাররক্ষক মো. জীবন ও গাড়িচালক আবদুস সবুরকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ নিয়ে এসেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই তদন্ত কমিটি হবে। তিনি সরাসরি নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এটা মন্ত্রণালয় তদন্ত প্রতিবেদন দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। পরে সাংবাদিকেরা সেখান থেকে কর্মসূচি স্থগিত করে চলে আসেন। এরপর রাতে সাংবাদিক বুলবুল হাবিব মামলা করেন।