চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আলী আজগার (টগর), দামুড়হুদা মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মো. রোকনুজ্জামানকে কৌশলে অপহরণ ও ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজিয়ে তাঁকে হত্যার অভিযোগে আজ বৃহস্পতিবার দামুড়হুদা আমলি আদালতে মামলাটি করেন নিহত ছাত্রের বাবা মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা কামাল মামলা আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মামুন আখতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন দামুড়হুদা মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম জাহাঙ্গীর, সহকারী পরিদর্শক (এসআই) তপন কুমার নন্দী ও শেখ রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল দিপু গাঙ্গুলী, খালিদ মাসুদ, নজরুল ইসলাম, শফিউর রহমান ও ফিরোজ ইকবাল এবং আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের মাছুম, সুমন, রাজিব ও সজল।
মামলার বাদী দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, মো. রোকনুজ্জামান ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বেআইনি, অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় এবং ভিন্ন মতের অনুসারী হওয়ায় আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে রোকনুজ্জামানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। আসামি আলী আজগার ভোট চুরির মাধ্যমে নির্বাচিত ভুয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আলী আজগারের নির্দেশে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট দুপুরে আসামি সজল বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র রোকনুজ্জামানকে কৌশলে মুঠোফোনে ডেকে দক্ষিণ চাঁদপুর ছটাঙ্গার মাঠে যেতে বলেন।
বাবা আবু বকর ছিদ্দিককে জানিয়ে রোকনুজ্জামান আসামি সজলের সঙ্গে ছটাঙ্গার মাঠে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর আসামিরা অস্ত্রের মুখে রোকনুজ্জামানকে অপহরণ করেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজখবর করেও কোথাও পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে লোকমুখে জানতে পারেন দামুড়হুদার জয়রামপুর কাঁঠালতলার বখতিয়ার মিয়ার বাঁশবাগানে রাত দুইটার দিকে একজনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে বাদী ছেলে রোকনুজ্জামানের লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন রাতে তাঁর দাফন করা হয়।
মামলায় আরজিতে আরও বলা হয়েছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোকনুজ্জামানকে হত্যার উদ্দেশ্যে এজাহারভুক্ত ১১ থেকে ১৫ নম্বর আসামি কৌশলে অপহরণ করেন। এরপর প্রধান আসামি আলী আজগারের নির্দেশে ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা রোকনুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করেন। সন্তানের দাফন শেষে বাদী মো. আবু বকর ছিদ্দিক ৩১ আগস্ট দামুড়হুদা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। বাদী দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় বাড়িতে ফিরে মামলা করতে দেরি হয় বলে আরজিতে উল্লেখ করেছেন।