কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলায় দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার ভুক্তভোগী দম্পতি মামলা করতে থানায় যাওয়ার পথে থানার ফটক থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন মারা যাওয়া গৃহবধূর স্বামী। তিনি বলেছেন, বিষপানের একদিন আগে ২৩ মে বৃহস্পতিবার মামলা করতে থানায় যাওয়ার সময় অভিযুক্ত জয়নালের সহযোগী পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলাম থানার ফটকেই তাঁদের আটকে দেন এবং মীমাংসার দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান।
মারা যাওয়া নারীর স্বামীর অভিযোগ, আগে ধার নেওয়া ২০ হাজার টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় স্থানীয় জয়নাল, সোলেমান, শুক্কুর ও আলম নামের চারজন তাঁর স্ত্রীকে দুই মাস ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। এই ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করেও বিচার পাননি তাঁরা। এরপর অভিমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনে ২৪ মে শুক্রবার বিকেলে বিষপান করেন। কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর ও জামালপুর জেলার দুটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ঘুরে পাঁচ দিন পর ২৯ মে বুধবার ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।
গতকাল শুক্রবার ভুক্তভোগীর গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ওই দম্পতির বিয়ে হয়। তাঁদের তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর দাবি, দিনমজুর হিসেবে কাজের জন্য তিনি টাঙ্গাইলে থাকেন। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে দেখেন স্ত্রীর শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। জিজ্ঞাসা করলে তিনি ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলেন। ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন তাঁরা ধর্ষণ করতেন বলে জানান। ওই ঘটনার বিচার চেয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও দূর সম্পর্কের মামা আমেজ আলীকে জানিয়ে মামলা করতে থানার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু থানার ফটকের কাছে পৌঁছানোর আগেই আমেজ আলী অভিযুক্ত জয়নালকে নিয়ে সেখানে যান এবং থানার কনস্টেবল রবিউল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মামলা করতে বাধা দেন। এ সময় কনস্টেবল রবিউল ইসলাম ওই দম্পতিকে বাসায় ফিরে যেতে বলেন। সে রাতেই তাঁদের বাসায় বৈঠক করে ‘কড়া বিচার’ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর দাবি, একই দিন রাতে অভিযুক্ত জয়নাল, সোলেমান, শুক্কুর ও আলমকে নিয়ে ভুক্তভোগী দম্পতির বাড়িতে আসেন আমেজ আলী, থানার কনস্টেবল রবিউল ও পুলিশের গাড়িচালক মোজাহারুল ইসলাম। তাঁরা ২০ হাজার টাকা দিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। পরে ওই দম্পতি টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে মীমাংসা না করেই তাঁরা চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে আজ শনিবার সকালে কনস্টেবল রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি মামলা করতে বাধাপ্রদান ও ভুক্তভোগীর বাসায় উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
এর আগে গতকাল রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত জয়নালের সঙ্গে কনস্টেবল রবিউলের ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। জয়নাল একজনের কাছে টাকা পাবেন বলে তাঁকে ডেকে নিয়ে ওই গৃহবধূর বাড়িতে যান। তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে ঘটনা জানতে পারেন। পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। ওসি আরও বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় পুরো পুলিশ প্রশাসন নেবে না। যে সব পুলিশ সদস্য এই কাজের সঙ্গে জড়িত, এই দায় তাঁদের।