বিলের এক পাশে সড়ক, অন্য পাশে ধানি জমি। জমির মধ্যে আলপথ। মানুষের চলাচল তেমন একটা নেই। তবু বিলের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। এতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। দেড় বছর আগে সেতুর উদ্বোধন হলেও সেতুর এক প্রান্তে কোনো সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। মানুষ ধান ও খড় শুকাতে ব্যবহার করছেন সেতুটি।
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পচাবহলা গ্রামের ফটকের বিলের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এই সেতুর অবস্থান। এলাকার বাসিন্দাদের এক পক্ষ বলছে, এখানে সেতুর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এদিকে কোনো সড়ক নেই। অন্য পক্ষের দাবি, সড়ক হলে মাঠের উৎপাদিত ফসল বাড়িতে নিতে গ্রামের মানুষের উপকারে আসবে সেতুটি। সে জন্য অবশ্য দুই পাশে সড়ক থাকতে হবে। সেতুটির পশ্চিম পাশে কোনো সড়ক নেই। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি। সেতুর পশ্চিম পাশে সড়ক হলে ফসল আনা-নেওয়াসহ যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
এলজিইডি জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সময় রাস্তা না থাকলেও সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে দ্রুত রাস্তা হয়। জামালপুর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে ওই সেতুর এক পাশের রাস্তা নির্মাণের অংশ যুক্ত করা আছে। সেতুটিতে শুধু ধান মাড়াইয়ের কাজে লাগছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, সেতুটি যদি কৃষকের কোনোভাবে কাজে লাগে, তাহলে তাঁরা ফসল উৎপাদনে আরও উৎসাহী হবেন।
গত শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পচাবহলা গ্রামে পৌঁছানো যায়। ইসলামপুর-পচাবহলা সড়কের পচাবহলা মোড়ের মজিবরের রাইস মিলের পাশ দিয়ে একটি সড়ক পশ্চিম দিকে ফটকের বিলে চলে গেছে। এক কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিলেই সেতুটি পাওয়া যায়। ওই রাইস মিল থেকে সেতু পর্যন্তই শুধু সড়ক আছে। সেতুটির পশ্চিম পাশে আর কোনো সড়ক নেই। পশ্চিমে ধানি জমি। সেতুটির আশপাশে তেমন কোনো ঘরবাড়ি নেই। সেতুর পশ্চিম পাশের এক থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে তেমন কোনো ঘরবাড়ি নেই। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে কোনো সড়ক নেই। সংযোগ সড়কের পরই জমি। শুধুই ফসলের জমি। আলপথ ছাড়া সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে।
পচাবহলা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পচাবহলা থেকে চিনাডুলী, ডেবরাইপ্যাচ, শিংভাঙা ও ধর্মকুঁড়া এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছরের ৩ জানুয়ারি সেতুর উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী ও জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান। ওই সময় পশ্চিম পাশের সড়ক নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় লোকজন দাবিও তুলেছিলেন। কিন্তু দেড় বছরেও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
পচাবহলা পূর্বপাড়া গ্রামের মনছুর মিয়া ফসলের মাঠ থেকে ঘাস কেটে কাঁধে খাঁচা ঝুলিয়ে সেতু পার হচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পচাবহলা গ্রামের মানুষের সব জমিজমা ব্রিজটার পশ্চিম পাশে। ব্রিজটা অনেক সুন্দর হইছে। কিন্তু পশ্চিম পাশে কোনো রাস্তা নাই। তাই সেতুর ওপর দিয়ে কোনো গাড়ি চলে না। হেঁটেই সবাই খেতে যাই। গাড়ি চললে কাঁধে তো আর খাঁচা বইতে হতো না।’
পচাবহলা গ্রামের আজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তা বানানোর লক্ষণ দেখি না তো। এককথায় ধান শুকানোর কাজে লাগছে সেতুটি।’
এলজিইডি জামালপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২২ মার্চ ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার ২০২ টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর সেতু নির্মাণের কাজটি শেষ হয়। আর ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি সেতুটির উদ্বোধন করা হয়।