খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে আয় ও সম্পদ বেড়েছে স্ত্রীরও

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বার্ষিক আয় ও সম্পদ দুটোই বেড়েছে। চার বছরের ব্যবধানে মৎস্য চাষ থেকে তাঁর আয় ১২ গুণ বেড়েছে। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের সময় তাঁর স্ত্রী শাহীন আকতারের কোনো আয় না থাকলেও বর্তমানে তিনি ব্যবসা থেকে বার্ষিক ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করছেন। এ কারণে তাঁর নামে স্থাবর–অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া খায়রুজ্জামানের হলফনামায় এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকতা ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনের কার্যালয় থেকে এই হলফনামা পাওয়া গেছে।

আয় ও সম্পদ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছি এটুকু তো থাকবেই। দেশের বাইরে এক ছঠাক কিছু নেই। বৈধ যা আছে, তাই দেখানো হয়েছে।’ স্ত্রীর আয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে তাঁর ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে ভারত থেকে পাথর আমদানির ব্যবসা শুরু করেছেন। তা থেকে যা আয় হয়েছে, সেটাই হলফনামায় দেখানো হয়েছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো রাজশাহী সিটি মেয়র নির্বাচিত হন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের তৎকালীন সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে পরাজিত হন। তবে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে তিনি আবারও মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যের পাশাপাশি রাজশাহী মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। তাঁর স্ত্রী শাহীন আকতার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

২০১৮ সালের হলফনামা ও এবারের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার সদ্য সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামাননের বার্ষিক আয় উল্লেখ করা হয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে কৃষি খাতে ২ লাখ ৩০ হাজার, বাড়িভাড়া ও অন্যান্য খাতে ৩৭ লাখ ৭০ হাজার, মৎস্য চাষ থেকে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও সম্মানী ভাতা ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত মেয়াদের হলফনামায় মৎস্য খাতে আয় দেখানো হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। সে হিসাবে মৎস্য খাতে তাঁর আয় বেড়েছে ১২ গুণের বেশি। গত নির্বাচনের সময় তাঁর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। এই হিসেবে তাঁর আয় বেড়েছে তিন গুণের বেশি।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, খায়রুজ্জামানের বর্তমানে অস্থাবার সম্পদ রয়েছে ৪ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকার। গত মেয়াদে এই সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৫ লাখ ৬৭ হাজার ২৭০ টাকা। গত মেয়াদের তুলনায় এই সম্পদ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
এর মধ্যে এবার নগদ টাকা রয়েছে ৭ লাখ ২ হাজার ২৩৭ টাকা। গতবার ছিল ৩০ হাজার। এবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা। গতবার ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা। এবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার। গতবার এই খাতে কোনো বিনিয়োগ ছিল না। এবার জিপ ও কারের মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার। গতবার ছিল ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার। স্বর্ণালংকার ৫৩ হাজার ৮৬২ টাকা। গতবার একই ছিল। বৈদ্যুতিকসামগ্রী এবার ২৫ লাখ, আসবাবপত্র ৭ লাখ এবং একটি শর্টগান ও পিস্তল মিলে ৬ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে এবার কৃষিজমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ একর। গতবার ছিল ১ দশমিক ৬৩ একর। আবাসিক বাড়ির পরিমাণ একই রয়েছে। এবার মৎস্য খামার দেখানো হয়েছে ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকা মূল্যের। গতবার এই খাত ছিল না। শুধু এই খাতে ২০ লাখ টাকার আয় দেখানো ছিল। এবার এই খাতে আয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। গত মেয়াদের হলফনামায় খায়রুজ্জামানের কোনো দেনা ছিল না। এবার পূবালী ব্যাংক লি. এর রাজশাহী শাখায় গাড়ি ক্রয় বাবদ ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা ঋণ দেখানো হয়েছে।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, গতবার স্ত্রী শাহীন আকতারের কোনো ব্যবসা ছিল না। এবার তাঁর ব্যবসা থেকে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ও মৎস্য চাষ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় দেখানো হয়েছে। ২০১৮ সালে তাঁর কোন স্থাবর সম্পদ ছিল না। তবে এখন কৃষিজমি আছে ১ দশমিক ৭৭ একর, মাছের খামার হয়েছে ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। নতুন করে নগরের উপশহরে একটি পুরাতন দোতলা বাড়িও হয়েছে শাহীন আকতারের।

২০১৮ সালে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে শাহীন আকতারের উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল। এ ছাড়া ৯২ লাখ ৩ হাজার টাকা মূল্যের অন্য সম্পদ ছিল। এর মধ্যে নগদ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত ছিল। পাঁচ বছরে তার স্বর্ণ বাড়েনি। স্বর্ণ বাদে অন্য অস্থাবর সম্পদের মূল্য বেড়ে ২ কোটি ৮৪ হাজার টাকা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০ টাকা, ব্যাংকে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭০ টাকা, ১০ লাখ টাকার শেয়ার, ৯ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত, আড়াই লাখ টাকার ইলেকট্রনিকসসামগ্রী এবং ২ লাখ ১০ হাজার টাকার আসবাবপত্র হয়েছে তাঁর নামে।

২১ জুন ইভিএমের মাধ্যমে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। এবার ১৫২টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৩টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এই নির্বাচনের চার মেয়র প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম, জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম।