বিএনপির সরকারবিরোধী অবস্থানের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে টানা চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের লামাবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সাবেক প্যানেল মেয়রের পাশাপাশি মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যে চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তিনি প্রতিবারই বিজয়ী হন। বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও সুপরিচিত।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিলেট সিটি করপোরেশনে আগামী ২১ জুন ইভিএমে ভোট হবে। ২৩ মে সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২ জুন।
সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক্স্বাধীনতা ও সুশাসন নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো ভোট দিতে পারছে না। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, নির্বাচন কমিশন সরকারের অজ্ঞাবহ। সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে ৪২টি ওয়ার্ডের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘বিএনপির চলমান আন্দোলনে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে দলের শহীদ হওয়া নেতা-কর্মীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমি আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিলাম।’
টানা চারবারের নির্বাচিত এই কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দল ও দেশের স্বার্থে আমি নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যক্তিগত চাওয়া–পাওয়ার চেয়ে আমার দল ও দেশ বড়। আমার কাছে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’ তিনি বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
রেজাউল হাসান বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মাত্র ৩০ বছর বয়সে মানুষ আমার প্রতি যে আস্থা আর বিশ্বাস রেখেছিলেন, তা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডবাসী আমাকে যে ভালোবাসা ও সম্মান দিয়েছেন, এ ঋণ আমি কোনো দিনই শোধ করতে পারব না। তবে আমি যেহেতু রাজনীতি করি, সবার সঙ্গে রাজপথেই দেখা হবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের বিএনপিদলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন বর্জন করবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল হাসান বলেন, ‘তিনি (আরিফুল) আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ২০ মে জনসভা করে তিনি অবস্থান জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আশা করছি, তিনিও সুচিন্তিত মতামতই দেবেন।’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে নির্বাচন হবে, সেটা তৈরি নির্বাচন, পাতানো নির্বাচন, অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের নির্বাচন। আজ্ঞাবহ এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনোভাবেই অর্থপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভালো নেতৃত্ব বের হবে না। যদি কখনো মানুষের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়, তখন নিশ্চয়ই আমরা নির্বাচনে আসব।’