ঝড়ের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া পিরোজপুরের ইন্দুরকানি ও ভান্ডারিয়া উপজেলার চারটি ট্রলার নিখোঁজ হয়েছে ও একটি ট্রলার ডুবে গেছে। নিখোঁজ ও ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলোর ৬১ জন জেলে নিখোঁজ হয়েছিল। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের ছয় জেলেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে এ ঘটনা ঘটে। ট্রলারমালিক ও স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে পিরোজপুরের পাড়েরহাট বন্দরের শতাধিক ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জন্য গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার এসব ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে। শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত চারটি ট্রলারসহ ৫৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া ইন্দুরকানি উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের সাইফুল মাতুব্বরের এফবি ভাই ভাই নামের একটি ট্রলার ডুবে গেছে। ওই ট্রলারে থাকা ১২ জন জেলের ৬ জন উদ্ধার করেছে আরেকটি ট্রলার। তবে এখনো ছয় জেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী জাহিদ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ইন্দুরকানি উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের হেলাল মৃধার মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া–১৬১ নামের ট্রলারটি ১৭ জন জেলেসহ নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়া একই গ্রামের দুলাল মৃধার এফবি আবদুল্লাহ-১ ট্রলারটি ১২ জন জেলেসহ, কালাইয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের এফবি জিদনী ট্রলার ১৩ জন জেলেসহ এবং ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালীর আবদুর রহিমের এফবি ছোট হুজুরের দোয়া ট্রলারটি ১৩ জন জেলেসহ নিখোঁজ রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ইন্দুরকানির পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফিরে আসে এফবি আবদুল্লাহ–২ নামের ট্রলার। এর মালিক হালিম খান বলেন, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া শত শত ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়েছিল। অনেক ট্রলার ভারতের জলসীমার মধ্যেও চলে গেছে। বেশির ভাগ ট্রলার উপকূলে ফিরে এলেও এখনো কয়েকটি ট্রলার জেলেসহ নিখোঁজ রয়েছে।
নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি ইন্দুরকানি উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া, সাউদখালী ও কালাইয়া গ্রামে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দিলরুবা মিলন। ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের আরিফ মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই ভাইয়ের দুটি ট্রলার ২৯ জন জেলেসহ নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের স্বজনেরা উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন।’
এফবি ভাই ভাই ট্রলারের নিখোঁজ মাঝি উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। তাঁর স্ত্রী হেলেনা বেগম বলেন, ‘১৩ আগস্ট ১২ জন জেলেসহ আমার স্বামী বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’
জানতে চাইলে ইন্দুরকানি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা খানম বলেন, ‘নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারের জন্য আমরা বিভিন্ন মহলে চেষ্টা করছি। স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি।’
পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল বারী শনিবার রাতে বলেন, ‘নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে আমরা কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশপাশের মৎস্য বন্দরগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত আছে।’