কক্সবাজারের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়ার প্যারাবনের গাছ কাটা হয়েছে চিংড়ি ঘেরের জন্য। এতে ধ্বংস হয়েছে ৩ হাজার একর প্যারাবনের অন্তত ২৩ লাখ গাছ। সম্প্রতি তোলা
কক্সবাজারের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়ার প্যারাবনের গাছ কাটা হয়েছে চিংড়ি ঘেরের জন্য। এতে ধ্বংস হয়েছে ৩ হাজার একর প্যারাবনের অন্তত ২৩ লাখ গাছ। সম্প্রতি তোলা

প্যারাবন কেটে আওয়ামী লীগ নেতাদের চিংড়িঘের উচ্ছেদ চান এলাকাবাসী

কক্সবাজারের মহেশখালীর প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় তিন হাজার একর প্যারাবন কেটে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ছোট–বড় ৪৭টি চিংড়িঘের নির্মাণ করেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও ঘেরগুলো উচ্ছেদ হয়নি। অবৈধভাবে নির্মিত ঘেরগুলোতে এখন চিংড়ির চাষ চলছে।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চিংড়িঘেরগুলোর দ্রুত উচ্ছেদের দাবি করেন। পাশাপাশি বিরান হওয়া জায়গায় গাছ রোপণের দাবিও জানান তাঁরা। তা ছাড়া সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে এলাকা বিলীনের পাশাপাশি অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের জীবন–জীবিকা হুমকিতে পড়বে।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ইয়ুথ ফর ইকোলজি কনজারভেশন’–এর প্রধান সমন্বয়ক এস এম রুবেল বলেন, প্রকাশ্যে তিন হাজার একরের বেশি প্যারাবন কেটে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী ছোট–বড় ৪৭টি চিংড়িঘের নির্মাণ করলেও উপজেলা প্রশাসন ও বেজা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাতে কাটা পড়ে অন্তত ২২ লাখ বাইনগাছ। এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীপের পাঁচ লাখ মানুষ।

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, অবৈধ চিংড়িঘেরগুলো উচ্ছেদ করে সেখানে পুনরায় বনায়ন সৃজনের পরিকল্পনা চলছে। তা ছাড়া দখলদারদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে গত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাঁচ-ছয় মাস ধরে সোনাদিয়া ও পাশের ঘটিভাঙা এলাকায় প্যারাবন দখলের মহোৎসব চলছে। ইতিমধ্যে ৩ হাজার ২০০ একর প্যারাবন ধ্বংস করে আওয়ামী লীগের নেতারা অসংখ্য চিংড়িঘের নির্মাণ করেন। সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম পাড়া ও পূর্ব পাড়ায় আরও চারটি চিংড়িঘের নির্মাণ চলছে। সেখানে মাটি কাটার খননযন্ত্র দিয়ে চিংড়িঘের নির্মিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

গত ৮ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক ফাইজুল কবির বাদী হয়ে প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণকারী আওয়ামী লীগের ২২ নেতা-কর্মীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা করেন। কিন্তু মামলা দায়েরের এক মাসেও একজন দখলদারও ধরা পড়েনি।

এ প্রসঙ্গে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, মামলাটি তদন্ত করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে চিংড়িঘের থেকে ইতিমধ্যে ১০টি খননযন্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক ফাইজুল কবির বলেন, তদন্ত চলছে। জনবলেরও সংকট আছে। পুলিশ চাইলে আসামিদের ধরতে পারে।

প্যারাবন ধ্বংস হওয়ায় সোনাদিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি তোলা

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, অবৈধভাবে নির্মিত ৩০টির বেশি ঘেরে চিংড়ি পোনা ছাড়া হয়েছে। একটি ঘেরের শ্রমিক আবু বক্কর বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে চিংড়ি বিক্রির জন্য ধরা হবে। তখন প্রতি কেজি চিংড়ি ৭০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হবে।

ঘটনাস্থলে বেজা কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তাকর্মী গিয়াস উদ্দিন বলেন, অবৈধ ঘেরের মালিকেরা আত্মগোপন করলেও চাষ বন্ধ নেই। দখলদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম ও পূর্ব অংশে বিশাল প্যারাবন নিধন করে আরও চারটি চিংড়িঘের নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। বিষয়টি বেজা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কাজ হচ্ছে না।

অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদের দাবিতে সম্প্রতি কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দারা মানববন্ধন করেন। কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শেখ কামাল বলেন, বেজা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে প্যারাবন নিধনের মহোৎসব চলছে। এখন চিংড়িঘেরগুলো উচ্ছেদ করে পুনরায় বনায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহেশখালীর ইউএনও মীকি মারমা বলেন, এখন নতুন করে আর প্যারাবন কাটা হচ্ছে না। সম্প্রতি নির্মিত চিংড়িঘেরগুলো উচ্ছেদ করে সেখানে প্যারাবন সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।