ময়মনসিংহে এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। শুক্রবার সকালে
ময়মনসিংহে এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। শুক্রবার সকালে

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

‘দাপুটে’ এনা বাস বন্ধ, গেটলক সার্ভিস অন্য বাস না থাকায় ভোগান্তি

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একমাত্র গেটলক সার্ভিস হিসেবে চলাচল করত এনা পরিবহনের বাস। মালিকপক্ষের ক্ষমতার দাপটে অন্য কোনো পরিবহন এ মহাসড়কে জায়গা করতে পারেনি। এনা পরিবহনের মালিকের নাম খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এনা বাস চলছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনার মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পরিবহন খাতে ব্যাপক প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ। এনা বাসের শ্রমিকেরা সড়কে চলাচলকারী অন্য বাসের শ্রমিকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করতেন। সরকারের পতনের পর থেকেই ময়মনসিংহসহ সারা দেশে এনা পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সাধারণ যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, ময়মনসিংহ থেকে প্রতিদিন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ঢাকায় যান। ১৫ বছর ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গেটলক সার্ভিস হিসেবে শুধু এনা পরিবহনের বাস চলাচল করেছে। এর আগে সড়কে গেটলক সার্ভিস ছিল সৌখিন পরিবহনের বাস। ২০০৯ সালের পর সৌখিনের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীর তুলনায় এনার বাসের সংখ্যা কম থাকলেও অন্য কোনো পরিবহন সড়কে জায়গা করতে পারেনি। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে লোকাল বাস হিসেবে সৌখিন পরিবহনের বাস চলে।

ময়মনসিংহ থেকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় চলাচল করা অন্তত চারজন যাত্রী জানান, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বিকেলে কর্মজীবী মানুষ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার সময় ঢাকার মহাখালী টার্মিনালে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে এনার টিকিট কাটতেন। অনেক সময় টিকিট পাওয়া যেত না। এতে দুর্ভোগে পড়তে হতো। একইভাবে ছুটি শেষে শনি ও রোববার ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথেও ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে ভোগান্তিতে পড়ে হতো। যাত্রীদের ভোগান্তির পরও সড়কে অন্য কোনো বাস চলাচল করতে দেওয়া হয়নি।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সিংহ প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ এবং রোববার ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় চলাচল করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহে ভোগান্তি নিয়ে মানুষ চলাচল করছেন। বিভাগীয় শহর হিসেবে ময়মনসিংহ থেকে বিলাসবহুল এসি বাস চলাচল করা উচিত। কিন্তু ময়মনসিংহ থেকে একটি পরিবহনের বাস চলে আসছিল। সেটাও পর্যাপ্ত ছিল না। সম্প্রতি সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সৌখিন বাসে আসতে হয়েছে। সৌখিনের বাস পুরোনো। আসনগুলোর মধ্যে দূরত্ব কম হওয়ায় আরাম করে বসা যায় না।

শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। টার্মিনালে এনা পরিবহনের কোনো বাস নেই। যাত্রীরা কাউন্টারে গিয়ে এনা বাস না পেয়ে সৌখিন বাসে উঠছেন। একমাত্র সৌখিন পরিবহনের বাস চলতে দেখা যায়।

সৌখিন বাসের কোনো টিকিট কাউন্টার না থাকায় কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। আবদুর রাজ্জাক নামের একজন শ্রমিক জানান, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২০০ টাকা ভাড়ায় লোকাল বাস হিসেবে সৌখিন চলছে। সৌখিনের আনুমানিক ১৭০টি বাস আছে। সৌখিন বাসের নির্দিষ্ট কোনো একক মালিকানা নেই। অনেক মালিকের বাস সৌখিন পরিবহনের নামে চলছে।

মাসকান্দা টার্মিনালে এনার কাউন্টার বন্ধ থাকলেও কাউন্টারের সামনে দেখা হয় এনার ময়মনসিংহের ব্যবস্থাপক রতন পণ্ডিতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে এনা পরিবহনের মোট বাস ৬৭টি। এর মধ্যে খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ৩৮টি বাস। বাকিগুলো বিভিন্ন মালিকের। সরকার পতনের পর প্রথম তিন দিন সব বাস বন্ধ ছিল। এরপর কিছুদিন এনায়েত উল্লাহ ছাড়া অন্য মালিকদের বাস চলেছে। তবে সড়কে চলতে অনিরাপদ মনে হওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে আবার সব বাস বন্ধ করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, আজ শুক্রবারও এনায়েত উল্লাহ ছাড়া অন্য মালিকদের বাস চলছে। তবে সরেজমিনে কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি। মাহবুবুর রহমান বলেন, সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সৌখিন পরিবহনকে গেটলক সার্ভিস হিসেবে চালানো হবে। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসি বাস চালানোরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।